মানুষের প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার অদম্য মনোবাসনাকে ঘিরে ক্রমশ উন্নত থেকে উন্নততর প্রযুক্তিবিদ্যার সৃষ্টি। প্রথমে সে শেখে বিভিন্ন শক্তির ব্যবহার, যেমন আগুনের আবিষ্কার। তারপর প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তিকে প্রয়োজনমতো অপর শক্তিতে রূপান্তরের পালা, যেমন বাষ্পচালিত যান, অবশেষে বিংশ শতাব্দীর সূচনায় মানুষ সাফল্যের সঙ্গে রপ্ত করে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার বিদ্যা এবং মেতে ওঠে প্রকৃতিকে বশ করার খেলায়। পরমাণু শক্তির আহরণ থেকে শুরু করে টেস্টটিউব বেবি, আবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘DNA-Engineering’ হলো এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বুঝে না বুঝে দৈনন্দিন জীবনেও আমরা এইরকম প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকি। কীরকম? একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যায় প্রতিটি ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্র, টেলিভিশন, মোবাইলফোন, ক্যামেরা, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি যা আপনি আমি অহরহ ব্যবহার করে চলেছি, সর্বত্রই রয়েছে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার সুনিপুণ প্রচেষ্টা।
তবে জানেন কি, এই ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে হয়তো খুব শীঘ্রই বাজারে আসতে চলেছে নতুন প্রযুক্তি। আরও গতিশীল, কম্প্যাক্ট, হালকা, এবং সুলভ, কারণ ব্যাটারির খরচাও অনেক কম! হ্যাঁ, সেই প্রযুক্তির নাম ‘ফোটোনিক্স’। তবে তার আগে ভালো করে জেনে নেওয়া দরকার আজকের যুগের ইলেকট্রনিক টেকনোলজির ঘাটতিগুলো ঠিক কী কী এবং এর সমাধানই বা কী করে সম্ভব [১-৪]?
ইলেকট্রনিক যন্ত্র কাজ করে কীভাবে? এর ঘাটতিগুলো কী কী?
‘ইলেকট্রনিক্স’ বা ‘তড়িৎ-কণা বিদ্যা’ হলো পদার্থবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা বা বিদ্যা যেখানে বিভিন্ন যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের সাহায্যে উপযুক্ত মাধ্যমে কী করে তড়িৎ কিম্বা ইলেকট্রনের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে নিজের সুবিধা মতো কাজে লাগানো যায় তাই নিয়ে আলোচনা করা হয় [৫]। যন্ত্র বলতে গ্যাসটিউব, ট্রানজিস্টার, কিংবা মাইক্রোচিপ হতে পারে। তাতে মাধ্যম হতে পারে তড়িৎ পরিবাহী গ্যাস, সেমিকন্ডাক্টার/অর্ধপরিবাহী পদার্থ যেমন সিলিকন ইত্যাদি। ইলেকট্রনিক্সে অভূতপূর্ব পারদর্শিতার নিদর্শন আমাদের হাতের মুঠোয় বন্দি তন্বী স্মার্ট ফোনটি, বা ডেস্কের উপর রাখা ছিমছিমে গড়ন ল্যাপ্টপখানি।
কম্পিউটার চলে তড়িৎ শক্তিতে। সে আমাদের মতন সংবেদনশীল বা আবেগপ্রবণ নয়। সে বোঝে শুধু তার ‘মাদার বোর্ড’-এ থাকা ট্রানজিস্টরগুলোতে তড়িৎ-বিভব বা ভোল্টেজের ওঠানামা। যদি ভোল্টেজ কম দেওয়া হয় তবে ভাবে শূণ্য (০) আর বেশি দিলে (সাধারণত ৫ ভোল্ট) বোঝে এক (১)। যা কিছু কাজ, জটিল গাণিতিক হিসাব-নিকাশ, রকেট উৎক্ষেপণ থেকে গেম খেলা বা চ্যাট, সিনেমা দেখা, সবই হয় এই ‘০’ ও ‘১’ এর সমন্বয়ে অথবা কম্বিনেশনে। শুধু কম্পিউটার কেন, ইলেকট্রনিক্সের যে কোনো যন্ত্র, মোবাইল ফোন থেকে আজকের ডিজিটাল টেলিভিশন, সব এভাবেই কাজ করে। এই ‘০’ বা ‘১’ কে বলে এক একটি ‘বিট’। শুধুমাত্র দুটি সংখ্যা, ‘০’ এবং ‘১’ এর সমন্বয়ে তৈরি এ হেন গাণিতিক শাখাকে বলে ‘বাইনারি সিস্টেম’ যা ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স-এ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলির মধ্যে থাকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র (প্রায়শই ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার থেকেও ছোটো [৬], মাত্র কয়েক ন্যানোমিটার (১০−৯) সাইজের) ‘সুইচ’ বা ট্রানজিস্টার যা অভ্যন্তরীন সার্কিটের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ এবং অভিমুখকে আমাদের প্রয়োজনানুসারে নিয়ন্ত্রণ করে (চিত্র ১)। বাইরে থেকে কি-প্যাডের মাধ্যমে আমরা আসলে এই সুইচগুলোই চালু (অন্) বা বন্ধ (অফ্) করে সার্কিটের বিভব বা ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। আজকের যুগের উন্নত কম্পিউটারে এরকম কয়েক কোটি সুইচ বা ট্রানজিস্টার বর্তমান, যেগুলোকে আমরা বাইরে থেকে প্রোগ্রামের সাহায্যে নিমেষের মধ্যে অন্ বা অফ্ করতে পারি। কম্পিউটারের স্পিড কত বেশি হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে কত দ্রুত এই সুইচগুলো অফ্ বা অন্ করা যায়, এককথায় কম্পিউটারের ‘ক্লক-স্পিড’-এর উপর [৭]।
উদাহরণস্বরূপ, আমাদের কম্পিউটারের এই ক্লকগুলির স্পিড সাধারণত গিগা (১০৯) হার্ৎজ হয়, যার মানে হল এই কম্পিউটারের কন্ট্রোলিং সুইচগুলি সেকেন্ডে প্রায় ১০৯ বার বা একশো কোটি বারের বেশি অন্-অফ্ করা যায়। আপনিও আপনার প্রসেসরের ক্লক-স্পিড দেখতে পারেন ‘windows’ এর ‘run’ এ গিয়ে ‘dxdiag’ টাইপ করে। বুঝতেই পারছেন, সেকেন্ডে কয়েকশো কোটি সংখ্যাটা নেহাতই ছোটো নয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এতেই থেমে থাকতে চাননা এবং পারেনও না। কারণ দিনবদলের সাথে সাথে তামাম বিশ্বজুড়ে তথ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে বিপুলহারে যা প্রসেস করা আজকের যুগের ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের পক্ষে খুব শীঘ্রই হয়ে উঠবে সাধ্যাতীত [১০]।
অতএব নিরন্তর প্রয়াস চলে কী করে এই কম্পিউটারগুলিকে আরও ছোটো, গতিশীল এবং সুদক্ষ করে তোলা যায়। সমস্যা এখানেই! ইলেকট্রনিক সার্কিটের মিনিয়েচারাইজেশন যেমন খুশি তেমন ভাবে করা সম্ভব না। কারণ, যখনই দুটি ইলেকট্রনিক সার্কিট একে অপরের খুব কাছে আসে, তখন এদের মধ্যে তড়িৎ-কণা বা চার্জ জমা করে রাখার ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়। চার্জ-ধারণ করার এই প্রবণতাকে বলে ধারকত্ব বা capacitance। এরা তখন পাত্রের মতন ইলেকট্রনগুলিকে এদের চারিধারে বন্দি করে ফেলে। ফলস্বরূপ, আমরা যত স্পিডেই বাইরে থেকে এই সুইচগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করিনা কেন, যেহেতু বন্দি ইলেকট্রনগুলি সহজে নড়াচড়া করতে পারেনা, সেহেতু কম্পিউটারের স্পিড-ও মিনিয়েচারাইজেশনের সঙ্গে কমতে শুরু করে। তাই এতদিন ইন্টেল-এর সহপ্রতিষ্ঠিতা গর্ডন মূরের ১৯৬৫ সালে করা বিখ্যাত ভবিষ্যতবাণী (Moore’s law) যে সেমিকন্ডাক্টর চিপে ট্রানজিস্টারের ঘনত্ব প্রতি দুইবছরে দ্বিগুণ হবে তা কমবেশি সত্যি বলে প্রতিপন্ন হলেও, ইলেকট্রনিক ট্রানজিস্টারের আয়তন আরও ছোটো করা ক্রমশই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে [১১]। এই সমস্যার সমাধানেই আজ আমরা আলোকবিজ্ঞানের একটি শাখা ফোটোনিক্স বা আলোক-কণা বিজ্ঞানের শরণাপন্ন।
আলোকবিজ্ঞানের বিস্তার
ইলেকট্রনিক্সের মতো কিন্তু আলোকবিজ্ঞানের ব্যবহারও সর্বত্র। হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত দুই দানবীয় যমজ কৃষ্ণ-গহ্বরের সংঘর্ষে উদ্ভূত অতিদুর্বল মহাকর্ষীয় তরঙ্গের পরিমাপ থেকে [১২] পারমাণবিক ঘড়িতে অতিক্ষুদ্র অণু-পরমাণুর কম্পনের মাধ্যমে এক সেকেন্ডের কোটি কোটি ভাগের এক ভাগ সময়ের নিখুঁত পরিমাপ করা পর্যন্ত আলোকবিজ্ঞানের বিস্তার [১৩, ১৪]। অবাক করা কান্ড হোলো, একদিকে যেমন উচ্চ উষ্ণতায় ধাতু গলিয়ে ঢালাইয়ের কাজ, তেমনি অন্যদিকে পরম শূন্য তাপমাত্রায় পৌঁছানো, দুই ক্ষেত্রেই লেসার ব্যবহৃত হয়। আবার সমুদ্রের নিচে পাতা মাইলের পর মাইল দীর্ঘ অপটিক্যাল ফাইবার (Optical Fiber) কেবল্-এর সৌজন্যে আজ আমাদের বাড়িতে দ্রুত-গতি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট (চিত্র ২) যা আমার আপনার নিত্য অনলাইন লেকচার শোনার, ইউটিউব ভিডিও অথবা নেটফ্লিক্সে রোমহর্ষক সিরিজ দেখার সঙ্গী [১৫, ১৬]। আলোক ঝলমলে পুজো প্যান্ডেলের LED লাইট, ছানি অপারেশনে ব্যবহৃত লেসার রশ্মি, বা আপনার টেবিলে অযত্নে লালিত একসময়ের খুব প্রিয় ধূলিমাখা সিডিটা, সবই আলোকবিজ্ঞানের দান। তবে আলোকবিজ্ঞান (অপটিক্যাল সায়েন্স) আর আলোক-কণা বিজ্ঞান (ফোটোনিক্স) পুরোপুরি এক নয়। সেটা বিস্তারিতভাবে জানতে গেলে আলোর গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। বস্তুত, ফোটোনিক্সকে আলোকবিজ্ঞানের একটি বিশেষ ধারা বলে চিহ্নিত করা চলে।
আলোর গতিপ্রকৃতি
আলো একপ্রকার তরঙ্গ (wave) নাকি দ্রুতগতি সম্পন্ন কণার (particle) সমন্বয়? এই শতাব্দীব্যাপী বিতর্কে মহাবিজ্ঞানী নিউটন (কণা) থেকে হাইগেন্স (তরঙ্গ), ম্যাক্সওয়েল (তরঙ্গ) থেকে প্ল্যাঙ্ক অথবা আইনস্টাইন (আবার কণা!), কেউই বাদ যাননি। অবশেষে, পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী ডি ব্রগলী এবং অন্যান্যরা ব্যাখ্যা দেন যে খামখেয়ালী আলোর দ্বৈতস্বত্বা বিদ্যমান। সে কখনও তরঙ্গধর্মী, কখনও বা কণাধর্মী। যেকোনো বস্তু থেকে যখন আলো প্রতিফলিত হয় তখন আমরা তাকে দেখতে পাই। প্রতিফলন (reflection), প্রতিসরণ (refraction), এবং ব্যতিচার (interference) আলোর তরঙ্গধর্ম দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব। আবার আলোকে ছোটো ছোটো এক-গুচ্ছ কণা বা ফোটনের সমন্বয় হিসাবে না ভাবলে আলোকতড়িতক্রিয়ার (Photoelectric effect) ব্যাখ্যা করা সহজসাধ্য হয়না। এই আলোক-কণিকা বা ফোটন সাধারণত কোয়ান্টাম মেকানিক্স যা কিনা অতিক্ষুদ্র কণার ধর্ম ব্যাখ্যা করতে সক্ষম, তার সূত্র মেনে চলে। ‘ফোটন’ শব্দটির বুৎপত্তি গ্রীক শব্দ ‘ফোস্’ বা ‘ফোট্’ থেকে যার অর্থ হলো ‘আলো’। ভেবে দেখুন, ‘ফোটো’-গ্রাফি কিন্তু আলোরই কারসাজি। মজার কথা, স্বয়ং আইন্স্টাইন যিনি আলোকতড়িতক্রিয়া আবিষ্কারের মাধ্যমে আলোর কণাধর্ম প্রমাণ করেন ও ১৯২১ সালে নোবেল প্রাইজ পান, তিনি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আজগুবি এবং ভূতুড়ে নিয়মাবলীর ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। প্রসঙ্গত, আলোকবিজ্ঞান, সর্বোপরি, আলোক-কণা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কারের সঙ্গে একাধিক ভারতীয় বিজ্ঞানীর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত যা নিয়ে আমরা পরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
আলোক-কণা বিজ্ঞান বা ফোটোনিক্স কী? কেন?
যাইহোক, তাহলে কাকে বলে এই ‘ফোটোনিক্স’? ফোটোনিক্স হল এমন এক টেকনোলজি যার মাধ্যমে প্রয়োজনমতো বিভিন্ন রঙের (শক্তির) ফোটনকে তৈরী করা যায়, প্রবল বেগে ধাবিত দ্রুতগতি সম্পন্ন সেই ফোটনকে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এবং অবশেষে সেই ফোটনগুলোকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন কাজে লাগানো যায়। ইলেকট্রনিক্স সার্কিটের সমস্যাগুলির সমাধান লুকিয়ে আছে কিন্তু এখানেই। আচ্ছা, যদি সার্কিটে কারেন্ট বা ইলেকট্রন না পাঠিয়ে তার পরিবর্তে লাইট বা একগুচ্ছ ফোটন পাঠিয়ে একই কাজ করা যায়? ফোটনকণা একে অপরকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করেনা। তাই অপটিক্যাল সার্কিটে ইলেকট্রনিক সার্কিটের তুলনায় নয়েজ (Noise) অনেক কম হয়। এছাড়াও, ফোটনের রেস্ট-মাস শূন্য (০) হওয়ায় ইলেকট্রনের মতন ফোটন কোনো জায়গায় স্থিতাবস্থায় জমে থাকতে অক্ষম। ফলতঃ ধারকত্বের সমস্যা আলোর ক্ষেত্রে একদমই খাটে না। এই ফোটোনিক কম্পিউটারগুলোয় থাকে ছোটো ছোটো লেসার। লেসার অন্ থাকলে ‘১’ আর বন্ধ থাকলে বোঝায় ‘০’। নিরলস গবেষণায় অচিরেই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেলেন অপটিক্যাল ট্রানজিস্টার [১৭] বা সুইচ যা আলোর গতিবিধি এবং লেসারগুলোর অন-অফ নিয়ন্ত্রণ করে। এই কাজ অপটিক্যাল রেসোনেটরের মাধ্যমেও করা যায় (চিত্র ৩)।
সরু সরু তামার তারের বিকল্প হিসাবে আসে অতিসূক্ষ্ম কাঁচের তার যাকে বলে অপটিক্যাল ওয়েভগাইড। এরা মানুষের চুলের বেধের থেকে প্রায় একশভাগ সরু হলেও বিনা বাধায় আলো-কে সার্কিটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে একনিমেষে পৌঁছে দেয়। দেখা যায়, ফোটনিক টেকনোলজি ব্যবহার করে আরও ছোটো আকারের কম্পিউটার তৈরি করা যায় যার ক্লক-স্পিড কমপক্ষে কয়েক হাজারগুণ বেশি (১০১২ বা টেরা-হার্ৎজ) [৩, ১৫, ১৬]। এছাড়াও ফোটন ভর ও চার্জহীন হওয়ায় ফোটোনিক সার্কিটে খুব কম তাপ উৎপন্ন হয়। শক্তির অপচয় কমে [১৭]।
তথ্য আদানপ্রদান বা কম্যুনিকেশনে ফোটোনিক্স
তাহলে এখন বোঝা গেল কেন কম্পিউটারের ভিতরে ইলেকট্রনিক্সের জায়গায় আসতে চলেছে ফোটোনিক্স? কিন্তু এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে তথ্যের আদান-প্রদান করার জন্য ফোটোনিক্সের ব্যবহার ইতিমধ্যেই বহুল প্রচলিত। ফাইবার অপ্টিক্ ইন্টারনেট কেবলের মাধ্যমে অত্যন্ত উচ্চ-কম্পাঙ্কের (শক্তির) ফোটন কণিকার বা আলোর মধ্যে তথ্য এনকোড করে সমুদ্রের তলা দিয়ে পাঠানো হয় (সাধারণত, তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৫০ ন্যানোমিটার/কম্পাঙ্ক ১৯৩.৫৫ টেরা হার্ৎজ) এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশ (চিত্র ২)। এখানেও আলো ব্যবহার করার সুবিধাটা কী? উচ্চ কম্পাঙ্ক মানেই বিশাল ডেটা ব্যান্ডউইথ। বেশী ব্যান্ডউইথ মানে একসাথে অনেক ইউজার; বাফারিং ছাড়াই ইউটিউব ভিডিও! কিন্তু ইলেকট্রনিক তরঙ্গ বা সিগনালের কম্পাঙ্ক যত বাড়ে, ধাতব তারের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে তার শক্তি তত বেশী শোষিত হয় (উৎসাহী পাঠকেরা ‘skin effect’ সম্বন্ধে সার্চ করে দেখতে পারেন কেন এটা হয়)। এর দরুণ গিগা-হার্ৎজ এর বেশী কম্পাঙ্কে কাজ করে এমন ধাতব তার সহজলভ্য নয়, বা পেলেও খুবই দামি। এছাড়া ব্জ্র-বিদ্যুৎ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক/কৃত্রিম উৎস হতে উৎসারিত নয়েজও ইলেকট্রনিক সিগনালকে প্রভাবিত করে। আলোতে সেই নয়েজের প্রভাব কম। অতএব সবদিক থেকেই ইলেকট্রনিক্সের বদলে ফোটোনিক্সের ব্যবহার লাভজনক। (চলবে)
শিরোনামের ছবি – অপটিক্যাল ফাইবার। উৎস – https://www.pxfuel.com/en/free-photo-oozao
সূত্র (References):
[১] L. C. Kimerling, “Photons to the rescue: Microelectronics becomes microphotonics,” Electronic Device Failure Analysis, vol. 4, no. 3, pp. 15-20, 2002.
[২] A. Alduino and M. Paniccia, “Interconnects: Wiring electronics with light,” Nature Photonics, vol. 1, no. 3, pp. 153-155, 2007.
[৩] R. Won and M. Paniccia, “Integrating silicon photonics,” Nature Photonics, vol. 4, pp. 498-499, 2010.
[৪] https://www.intel.com/content/www/us/en/architecture-and-technology/silicon-photonics/silicon-photonics-overview.html
[৫] A. S. Sedra, and K. C. Smith, Microelectronics Circuits, Oxford University Press, 2015.
[৬] https://cml.harvard.edu/assets/Harvard%20Magazine_Virus-Sized%20Transistors_Jan-Feb2011.pdf
[৭] https://www.intel.com/content/www/us/en/gaming/resources/cpu-clock-speed.html
[৮] https://bartamanpatrika.com/detailNews.php?cID=67&nID=201922
[৯] https://scaleofuniverse.com/
[১০] https://www.technologist.eu/harnessing-optics-to-handle-the-data-crunch/
[১১] https://en.wikipedia.org/wiki/Moore%27s_law
[১২] B. P. Abott et al., “Observation of Gravitational Waves from a Binary Black Hole Merger,” Phys. Rev. Lett. Vol. 116, no. 061102, 2016.
[১৩] N. Picqué, and T. Hänsch, “Rulers of light,” Nature Photonics, vol. 13, no. 137, 2019.
[১৪] S. B. Papp, K. Beha, P. Del’Haye, F. Quinlan, H. Lee, K. J. Vahala, and S. A. Diddams, “Microresonator frequency comb optical clock,” Optica, vol. 1, no. 1, pp. 10-14, 2014.
[১৬] R. G. H. van Uden et al., “Ultra-high density spatial division multiplexing with a few-mode multicore fiber,” Nature Photonics, vol. 8, pp. 865-870, 2014. [১৭] Q. Xu and M. Lipson, “All-optical logic based on silicon micro-ring resonators,” Opt. Express, vol. 15, no. 3, pp. 924-929, 2007.