শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর সময় বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হন মাস্টার মশাইরা। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে কিছু সমস্যা এমন থাকে যা প্রাইমারি স্কুল থেকে আরম্ভ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত- অর্থাৎ, সমস্ত স্তরেই দেখতে পাওয়া যায়।
আমাদের প্রথাগত পড়ানোর পদ্ধতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাস্টারমশাই পড়িয়ে যান, আর ছাত্র-ছাত্রীরা শুনে যায়। ক্লাসে মাঝেমধ্যে মাস্টারমশাই একটি বা দু’টি ছোট প্রশ্ন করেন এবং সেখানে ছাত্রছাত্রীরা হয় হাত তোলে (যদি হ্যাঁ বা না জাতীয় বা মাল্টিপল চয়েস উত্তর হয়), অথবা মাস্টারমশাই এক-দু’জন ছাত্রছাত্রীকে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেন।
এই প্রথাগত পদ্ধতিতে ক্লাসের কত অংশ ছাত্রছাত্রী আসলে আলোচ্য বিষয় বুঝতে পারল, সেই তথ্য পাওয়া খুব মুশকিল। এর কারণ হিসাবে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা যায়ঃ
১। যে প্রশ্নের উত্তর হাত তুলে দেওয়া যায়, সেখানে অনেক সময় একজন অন্যজনের উত্তরে প্রভাবিত হতে পারে। ধরা যাক, কোন একটা বক্তব্য রেখে মাস্টারমশাই ছাত্র-ছাত্রীদের জিজ্ঞেস করলেন এই বক্তব্যটা সঠিক না বেঠিক? সঠিক মনে হলে ছাত্র-ছাত্রীদের হাত তুলতে নির্দেশ দিলেন তিনি। এক্ষেত্রে, যদি ক্লাসের ‘সেরা’ ছাত্রছাত্রীদের কয়েকজন বা ক্লাসের একটি বড় অংশ হাত তোলে, তাহলে সম্ভবত অনেক ছাত্র-ছাত্রীই তাদের দ্বারা প্রভাবিত হবে। ভাবনা চিন্তা না করেই ক্লাসের বাকি অংশের সাথে তাল মেলাবে। অর্থাৎ, মাষ্টার মশাইয়ের পক্ষে ক্লাসের ঠিক কত অংশ ছাত্র-ছাত্রী নিজে থেকে বক্তব্যটা বুঝতে পেরেছে, সেই তথ্য জোগাড় করা মুশকিলের।
২। হাত তুলে উত্তর দেওয়া যায় এমন প্রশ্নের বদলে যদি মাস্টারমশাই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেন, তাহলে প্রায়শই দেখা যায়, মনস্তাত্তিক কারণেই ক্লাসের বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী সেই আলোচনায় অংশ নেবে না। অনেকে ক্লাসের পড়া মোটামুটি বুঝতে পারলেও আত্মপ্রত্যয়ের অভাবে ভোগে। এক্ষেত্রে, কারোর যদি অটিজম বা অন্য কোন লার্নিং ডিসএবিলিটি থাকে, তার প্রভাব পড়ে।
অথচ, ক্লাসের কত অংশ ছাত্র-ছাত্রী কোন একটা আলোচ্য বিষয়ের মূল বক্তব্য বুঝেছে, সেই তথ্য না জানতে পারার ফল সুদূরপ্রসারী। এমনটা প্রায়ই হয়ে থাকে, যে, মাস্টারমশাই এক আলোচনা থেকে চলে গিয়েছেন অন্য আলোচনায়, কিন্তু ক্লাসের একটা বড় অংশ ভুল বুঝেছে, বা তাদের কাছে সব ‘ঘেঁটে গেছে’। অনেক সময়ই কোন কন্সেপ্ট-এর গোড়ার জায়গা পরিষ্কার না হলে সেই বিষয়ে সঠিক ধারণা তৈরি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীরা বাধ্য হয় বই-এর লাইন বা নোট মুখস্ত করতে।
এই সমস্যার সমাধান করতে প্রয়োজন একটা পদ্ধতির, যা মাস্টারমশাইকে Real Time Feedback দেবে। Real Time মানে ক্লাস চলাকালীনই তিনি বুঝে যাবেন তাঁর বক্তব্য কত ছাত্রছাত্রী ঠিকমত বুঝতে পেরেছে। এই তথ্য জোগাড়ের ক্ষেত্রে অন্যান্য যে সব প্রতিকূলতা থাকতে পারে, যেমন ছাত্রছাত্রীদের মনস্তাত্তিক সমস্যা বা অন্যদের দিয়ে প্রভাবিত হওয়ার সমস্যা, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে।
ক্লাসে রিয়েল টাইম ফিডব্যাক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর উপায় হিসাবে পাশ্চাত্যের বহু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্লিকার মেথড’ বলে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ‘ক্লিকার’ হল একটি যন্ত্র, যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের কোন একটাতে ভোট দিতে পারেন। জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’-তে এমন পদ্ধতির ব্যবহার আপনারা অনেকে দেখেছেন। কোন উত্তরে কতগুলো ভোট পড়ল তা মাস্টারমশাই তাঁর কম্প্যুটারে লাগানো যন্ত্র (রিসিভার) ব্যবহার করে জেনে যাবেন। লক্ষ্য করুন, এই পদ্ধতিতে কে কোন উত্তরে ভোট করলো সেটা কিন্তু অন্য কেউ জানতে পারছে না। তাই, অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সমস্যাও থাকছে না। আবার, ক্লাসে লাজুক ছাত্রছাত্রীরাও এই পদ্ধতিতে অংশ নিতে উৎসাহী হয়, কারণ, তারা ভুল উত্তর দিলেও কেউ জানবে না। হাসি-ঠাট্টা বা সবার সামনে মাস্টারমশাইয়ের বকা খাওয়া থেকে মুক্তি পাবে!
কন্টাই সাইন্স অ্যাক্যাডেমি ও ‘বিজ্ঞান’-এর যৌথ উদ্যোগে কাঁথি এলাকার কয়েকটি স্কুলে আমরা এই পদ্ধতি অনুসরণে পড়ানোর একটা প্রকল্প নিই। অর্থোন্নত দেশে ব্যবহৃত পদ্ধতির সরাসরি নকল করার বদলে আমরা পদ্ধতিটি একটু পালটে নিয়েছিলাম। এখানে ‘ক্লিকার’ নামে যন্ত্রের বদলে প্রতি ছাত্রছাত্রীকে কয়েকটা রং-বেরঙ্গের চৌকো কার্ড ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। মাস্টারমশাইয়ের করা মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের প্রথম উত্তর সঠিক হলে এক রঙের কার্ড, দ্বিতীয় উত্তর সঠিক হলে অন্য রঙের কার্ড ইত্যাদি তুলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আবার, মাস্টারমশাই ছাড়া অন্যরা যাতে তাদের উত্তর দেখতে না পায়, তাই তাদের বলা হয়েছিল কার্ডগুলো ঠিক কপালের লেভেলে তুলতে। দেখা গেলো, এতে ছাত্রছাত্রীরা শুধু একে অপরের উত্তরে প্রভাবিত হচ্ছে না, তাই না, এই পদ্ধতিতে যোগদান করার মজায় তারা ক্লাসে পড়া অনেক মনোযোগ দিয়ে শুনছে। স্কুলগুলোর মধ্যে থেকে দুটি স্কুলের মাস্টারমশাই-এর অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হল নিচে। তাঁদের পাঠানো লেখা কোন পরিবর্তন না করেই আমরা তুলে ধরলাম নিচে। দেখা যাচ্ছে, এনারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আংশিক সাফল্য পেয়েছেন। বাস্তব সমস্যা হিসাবে সিলেবাস শেষ করার তাড়া, ও কার্ড গুনতে অনেকটা সময় লাগছে – এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। যথাযথ প্রস্তুতির মাধ্যমে যেমন কোন প্রশ্নগুলো কোন বিষয়ের মূল কন্সেপ্টের জায়গাটাকে তুলে ধরে তা আগে থেকে তৈরি করে ক্লাসে নিয়ে যাওয়া ক্লাসে সময়ের সদব্যবহার করা যায়। কার্ড গোনার সমস্যা টেকনিক্যাল সমস্যা। এর সমাধানের জন্য অন্য কিছু বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। যেমন, Plickers নামে কোম্পানীর তৈরি কার্ডগুলো, যা মাস্টার মশাইএর ফোনে অ্যাপ থেকে সহজেই স্ক্যান করে নেওয়া যায়।
পাঠকদের মধ্যে থেকে কেউ আরও জানতে উৎসাহী হলে আমাদের ইমেইলে ([email protected]) জানান।
সৌম্যজিৎ সাহু, সহ–শিক্ষক , কাঁথি হাইস্কুল
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায়, শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়কেই যেতে হচ্ছে ।মূল লক্ষ্য কিভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষা প্রদান কৌশলকে আরো কত বেশি মনোগ্রাহী ও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি। তারই অংশ হিসেবে, আমাদের কন্টাই সায়েন্স একাডেমির সকল সদস্য ও সদস্যা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষা প্রদান করেন। শিক্ষা প্রদানের বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে “Card Method” হল একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণের পর তাদের বিষয় ভিত্তিক ধারণার তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন করতে পারে এবং শিক্ষকও তাঁর পাঠদান সঠিক হয়েছে কিনা যাচাই করতে পারবেন। এরই অঙ্গ হিসাবে আমিও “Card Method” বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সময় প্রয়োগ করেছি বা বলা যেতে পারে করে থাকি ।আমি যে ভাবে এই পদ্ধতি শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করে থাকি, তার পদ্ধতি ধাপগুলি নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
প্রথম ধাপ:
শিক্ষার্থীদের নিকট প্রথমে বিষয় ভিত্তিক ধারণা তৈরীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতা (Lecture method) ও প্রতিপাদন(Demonstration method) পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে থাকি ।যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণে উৎসাহী হয়। যদিও কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী পদ্ধতি দ্বয় কোনোটিতেই সঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে পারেনা।এই সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহিত করতে, শিক্ষা প্রদানের দিন বা পরবর্তী ক্লাসে তাৎক্ষণিক মূল্যায়নের জন্য 4 টি কার্ড তৈরি করতে বলা হয়। কার্ড গুলির রং যথাক্রমে লাল, সবুজ, নীল ও সাদা ।কার্ড গুলির আকৃতি হাতের তালুর থেকে কিছুটা ছোট হয়।
দ্বিতীয় ধাপ:
শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পর মূল্যায়নের জন্য 4 টি কার্ড কাছে রাখতে বলা হয়। পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে প্রথমে সহজ প্রশ্ন (MCQ) করা হয়। প্রতিটি কার্ড ( বর্ণ অনুযায়ী) পিছু একটি করে সম্ভাব্য উত্তর বোর্ডে লিখে দেওয়া হয় ।অবশেষে শিক্ষার্থীদের সম্ভাব্য উত্তর যুক্ত কার্ড – এর বর্ণ দেখাতে বলা হয়। শিক্ষক মহাশয় বিভিন্ন বর্ণের কার্ড- এর সংখ্যা গণনা করে বোর্ডে লিখে রাখবেন। উদাহরণ স্বরূপ শ্রেণিকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ডের চিত্র নিম্নে তুলে ধরা হলো-
- বিষয়: ভৌত বিজ্ঞান
- একক: আলো
- উপএকক: সংকট কোণ ও অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন
প্রশ্ন: আলোক রশ্মি সংকট কোনে আপতিত হলে প্রতিসরণ কোণ হয়
(a)900 | (b)450 | (c)300 | (d)00 |
লাল– 15 | সবুজ – 3 | নীল – 2 | সাদা- 5 |
তৃতীয় ধাপ:
শিক্ষক মহাশয় শিক্ষার্থীদের নিকট সঠিক উত্তরটি বলবেন এবং কারণ ব্যাখ্যা করবেন।
এই পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা ও অসুবিধা নিম্নে আলোচনা করা হল-
সুবিধা
- এই পদ্ধতি শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক মনস্তত্ত্ব সম্মত।
- আত্মপ্রত্যয়, স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা প্রভৃতি মানসিক বৃত্তি গুলির বিকাশ ঘটে ।
- প্রতিটি শিক্ষার্থী এক্ষেত্রে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে।ফলে এগিয়ে থাকা ও পিছিয়ে থাকা উভয় প্রকার শিক্ষার্থীর পাঠগ্রহণে উৎসাহ বাড়ে।
- এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক মূল্যায়নের সাথে সাথে, শিক্ষক ও তাঁর পাঠদান সঠিক হয়েছে কিনা যাচাই করতে পারবেন ।
- শিক্ষার্থীরা খেলার ছলে নিজের অজান্তেই প্রশ্ন ও উত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করবে।
অসুবিধা
- বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন করা সম্ভব নয় । কারণ অল্প সময়ে এতগুলি কার্ড গণনা করা, মূল্যায়ন ও কারণ বিশ্লেষণ করা একজন শিক্ষকের পক্ষে সমস্যা দায়ক ।
এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে প্রতি বর্ণের কার্ড পিছুএকজন করে শিক্ষার্থীকে কার্ড গণনার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে ।এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রশ্ন পর্বে অংশগ্রহণের সাথে সাথে নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা তৈরি হবে।
এই পদ্ধতির বিভিন্ন অসুবিধে থাকা সত্বেও আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি গুলির মধ্যে অন্যতম এবং বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয় শিক্ষায় তাৎক্ষণিক মূল্যায়নের এটি একটি আদর্শ পদ্ধতি।
অনুভব বেরা, মুস্তাফাপুর যশোদা সৎসঙ্গ বিদ্যাপীঠ
ঠিকানা: মুস্তাফাপুর, ব্লক: পটাশপুর, মহকুমা: এগরা, জেলা: পূর্ব মেদিনীপুর, ৭২১৪৪৩
সংশ্লিষ্ট শ্রেণীতে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা: ক বিভাগ – ৬০ জন, খ বিভাগ- ৬১ জন, দৈনিক উপস্থিতি ৫০ জন। আমার স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয়ে ভৌতবিজ্ঞানের প্রথম দুটি অধ্যায় পড়াবার সময় প্রায় তিন মাস কার্ড পদ্ধতি প্রয়োগ করি। প্রথমদিকে সপ্তাহে দুটি করে পিরিয়ড পরে ১৫ দিনে একবার মোট ১০-১২ পিরিয়ডেই প্রক্রিয়া চলে। স্বল্প দিনের হলেও এই প্রক্রিয়ার সাফল্য এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে যে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, তা অল্প কথায় জানাই।
সাফল্যের বিবরণ
অল্পদিনের এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে খুব বেশি ফিডব্যাক আশা করা যায় না। তবে প্রক্রিয়া চালাতে পারলে ভালো সাফল্য আসবে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
- এই পদ্ধতিতে পাঠদানের দিনে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগী ও বেশ উৎসাহী থাকতে দেখা গেছে। ছাত্রছাত্রীরা খোঁজ নিয়েছে এই পদ্ধতিতে ক্লাস আবার কবে নেওয়া হবে।
- একটি প্রশ্ন ও তার অপশনগুলি বলার পর কিছু কিছু ছাত্র-ছাত্রী জিজ্ঞাসা করেছে, সংশ্লিষ্ট বিষয় এই ধরনের আর কি কি প্রশ্ন হতে পারে এবং অপশানগুলো কি কি দেওয়া যেতে পারে।
- যে সকল দিনে ছোট্ট একটি পরীক্ষা করে তারপর কার্ড মেথড পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি, সেদিন বেশি সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী উত্তর দিতে পেরেছে।
- পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েরা যারা পেছনের বেঞ্চ দখল করত, বেশ কয়েকজনকে সামনের সারিতে বসতে দেখেছি।
যে সকল অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি
- একটি পিরিয়ডে ৪ থেকে ৬ টির বেশি প্রশ্ন করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ যে অপশন টি সঠিক তা কেন সঠিক তার ব্যাখ্যা দিয়ে অন্যগুলো কেন ভুল তার ব্যাখ্যা দিতে হয়। সময় অনেকটা লাগে। স্কুল কারিকুলাম এর সিলেবাস পেছনে তাড়া দিতে থাকে।
- একটি শ্রেণীতে ৪-৫ টি ছাত্র মোটামুটি ভালো। বাকি গড় ছাত্র এবং পিছিয়ে পড়া ছাত্র। সকল মানের ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রশ্ন করা ও অপশন দেওয়া একটি কঠিন কাজ বলে মনে হয়। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের পরামর্শ নেওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু তার অভাব অনুভব করেছি।
- ২০-৩০ জন ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে এই প্রক্রিয়া মসৃণভাবে সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে। কিন্তু ৪৫ থেকে ৫০ জন হয়ে গেলে ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করা মুশকিল। চপলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের স্বভাবগত কারণে এটি হয়।
- এই প্রক্রিয়া চালাতে গেলে অডিও ভিসুয়াল এডস খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিদ্যালয়গুলিতে সেরকম ব্যবস্থা নেই। থাকলেও তা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। নিজেকে প্রযুক্তি উপযোগী করে তুলতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও সব সময় তা করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
পদ্ধতিটির উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে এই পদ্ধতিটি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা আগে তৈরি করে দিতে হবে। প্রয়োজনে ভালো ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে কার্ড মেথড পদ্ধতি এর মক্ ক্লাস করে নেওয়া যেতে পারে।
- সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য প্রথমের দিকে সহজ সরল প্রশ্ন করা উচিত এবং সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের অপশন গুলোর মধ্যে যাতে বেশি সংশয় (কনফিউশন) না থাকে, তার দিকে নজর দেওয়া উচিত। পরবর্তীকালে এই পদ্ধতিটি সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা সড়গড় হয়ে গেলে ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর প্রশ্নের দিকে যাওয়া যেতে পারে।
- একটি পিরিয়ডের মধ্যে বরাদ্দ ৩৫-৪০ মিনিট। ধরে নেওয়া যেতে পারে, এর বেশি সময় পাওয়া যাবে না। তাই যেদিন কার্ড পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে, তার আগের ক্লাসে বিষয়বস্তু ভালো করে বুঝিয়ে দিলে ভালো হয়। পরে যেদিন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে, সেদিন বিষয়বস্তুর সারাংশ আবার জানিয়ে কার্ড পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে ছাত্রদের স্মৃতিশক্তি কেমন, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে।
- বছরের প্রথমে বা একাডেমিক সেশান শুরু হওয়ার আগে অন্ততপক্ষে চার-পাঁচটি স্কুলের অভিজ্ঞ বিষয়শিক্ষক একসাথে মিলিত হয়ে ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান এবং অংকের অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্নমালা তৈরি করা যেতে পারে। যদি বছরে প্রশ্ন তৈরি করার দুটি কর্মশালা করা হয় পুরো সিলেবাস এর উপর, তাহলে প্রশ্নের একটা খসড়া নমুনা পত্র তৈরি হতে পারে।এক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে – প্রশ্নের বৈচিত্র্য আনার সাথে সাথে প্রশ্নের মান ও ওই প্রশ্নের মাধ্যমে যাতে সব ধরনের মানের ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
প্রচ্ছদের ছবি: বনানী মণ্ডল
তথ্যসূত্র ও অতিরিক্তঃ
আরো ক্লিকার প্রশ্নের নমুনা দেখতে এই লেখাটি দেখুন: https://bigyan.org.in/2019/11/08/science-with-cartoon-01/