কি রে নান্টু, এরকম মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?
আরে দ্যাখ না ঝন্টু, কি আর বলবো। ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষা তো সবে শেষ হল। সামনেই জয়েন্ট। কিন্তু একটুও প্রিপারেশন হয়নি। জানিনা কি হবে। যদি পরীক্ষাটা খারাপ হয় তাহলে মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কোনটাই পড়তে পারবো না। কি যে হবে তা ভেবেই একটু চিন্তায় আছি।
তা এতে এতো চিন্তার কী হল, এবার না হলে পরেরবার হবে।
না রে, বাবা বলেছে যা করার এবারই করতে হবে, এক বছর শুধু শুধু কিছুতেই নষ্ট করা যাবে না। আমার কথা তো হল, তোর প্রস্তুতি কেমন বল, সব তৈরি?
আরে আমার আবার প্রিপারেশন কি ? আমি তো জয়েন্টে বসছিই না।
বসছিস না!!! বলিস কি রে? তাহলে কি করবি?
আমি কি ভাবছি জানিস নান্টু, আমি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করবো।
তা পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়ে তুই কি করবি? মাস্টারি? আর তো কিছু করা যায় বলে আমার জানা নেই।
আরে ধুর তুই জানিসই না। আমাকে ঘন্টুদা বলেছে বিজ্ঞানের যেকোন শাখা নিয়ে পড়াশোনা করেও ভবিষ্যতে ভারতবর্ষে অনেক ভালো মাইনের চাকরি পাওয়া যায়।
বলিস কি রে? তা কি কি চাকরি পাওয়া যায় বল না রে।
এই রে সেগুলো সব তো এখন মনে নেই। ওগুলো জানতে গেলে তো ঘন্টুদার কাছে যেতে হবে।
চল তাহলে এখুনি ঘন্টুদার কাছে যাই।
ঘন্টুদা বাড়ীতে আছো নাকি?
আরে ঝন্টু, আয় আয় ভেতরে আয়। সঙ্গে এটা কে? তোর বন্ধু?
হ্যাঁ গো ঘন্টুদা, এ নান্টু। ও জানতে চায় সাধারন বিজ্ঞান নিয়ে পড়েও ভবিষ্যতে ভালো চাকরির কী সুযোগ পাওয়া যায়। ওই যে তুমি একদিন আমাকে বলছিলে না।
হ্যাঁ রে। সে তো অনেক সুযোগ আছে, সব তো আর এখন বলে শেষ করা যাবে না।
তাও একটাদুটো অন্তত বলো। নান্টু খুব চিন্তায় আছে ওর ক্যারিয়ার নিয়ে।
ঠিক আছে, বলছি তাহলে শোন। সাধারন বিজ্ঞানের যেকোন শাখা নিয়ে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে ভারতবর্ষের যে যে প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভালো চাকরি পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হল ভাবা পরমাণু অনুসন্ধান কেন্দ্র (BARC)। একজন ছাত্র বা ছাত্রী পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা বা জীববিদ্যায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষাতেই ষাট শতাংশের অধিক নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হলেই সে এই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতা লাভ করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতে শুধু ষাট শতাংশের অধিক নম্বর পেলেই হবে না, তার জন্য তাকে একটি সর্বভারতীয় লিখিত প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে হবে। যে সমস্ত প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে তাদেরকে মুম্বাইয়ের ভাবা পরমাণু অনুসন্ধান কেন্দ্রে ইন্টারভিউ-এর জন্য ডাকা হয়। ইন্টারভিউতে নির্বাচিত প্রার্থীদের আবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এক বছর প্রশিক্ষণ নিতে হয়, অতঃপর তারা বৈজ্ঞানিক আধিকারিক হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত হয়। প্রকৃতপক্ষে এই পুরো প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে শুধুমাত্র BARC নয়, Department of atomic energy (DAE)- র অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যথা IGCAR, RRCAT, VECC, NPCIL, HWB, NRB, AERB, NFC ইত্যাদিতেও নিযুক্ত হওয়া সম্ভব। এই সুযোগ যে শুধুমাত্র বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীদের জন্যই উপলব্ধ তা নয়, কারিগরী শাখার ছাত্রছাত্রীরাও তাদের স্নাতক ডিগ্রী লাভের পর এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারে। তাদের নিযুক্তি প্রক্রিয়াও একইরকম এবং একই সর্বভারতীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়।
আচ্ছা ঘন্টুদা এই পরীক্ষাটার নাম কী? আর কোন সময় হবে কি করে জানব?
সাধারণত প্রতি বছর জানুয়ারী মাসে এই পরীক্ষাটির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তার আগে নানা সর্বভারতীয় পত্রপত্রিকায় এর বিজ্ঞপ্তি বের হয়। যেহেতু এই আবেদন প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র online, তাই BARC-র ওয়েবসাইটেও ওইসময় নজর রাখতে হয়।
ওয়েবসাইট-টা একটু বল তো ঘন্টুদা, লিখে নি।
BARC–এর ওয়েবসাইট হল – www.barc.gov.in। তবে এই পরীক্ষাটার বিষয়ে জানতে বা আবেদন করতে হলে সরাসরি www.barconlineexam.in ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে করতে হবে।
হুম। BARC-এ কিভাবে নিযুক্তি হয় সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু এখানে কাজ কি করতে হয় ?
ঝন্টু, এই প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম সম্পর্কে অনেক কিছুই ওপরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। প্রধানত নানারকমের গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নতি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য। ভারতে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে গবেষণা ও তার ব্যবহার DAE তথা BARC-এর প্রধানতম গবেষণার বিষয়। তারাপুরের TAPS (Tarapur Atomic Power Station) পারমাণবিক চুল্লীটি যে বর্তমানে ৫৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমর্থ, তা তো এই বৈজ্ঞানিক আধিকারিকদের গবেষণারই ফল। ক্যান্সার-এর রোগীদের জন্য বিকিরণ চিকিৎসার ( Radiation medicine) প্রযুক্তিও এই প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযগ্য কাজ। যেটি বর্তমানে মুম্বাই-এর টাটা মেমরিয়াল হসপিটাল-এর RMC বিভাগে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার এই প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিকরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দূরবীক্ষণ যন্ত্রও তৈরি করছে যা মহাজাগতিক গামা-রশ্মির সনাক্তকরণে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুতরাং বুঝতেই পারছিস এখানের বৈজ্ঞানিক আধিকারিকরা নিরন্তর এইসব নানারকম বিষয় নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন।
তাহলে আমি ভবিষ্যতে ওখানে PhD-ও তো করতে পারি ঘন্টুদা?
নিশ্চই পারিস নান্টু। ওখানে চাকরি করতে করতেই PhD করা সম্ভব এবং বেশীরভাগ কর্মচারী সেটা করেও। বেতনও বেশ ভালো। আধিকারিক লেভেলে প্রায় পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা ঢুকেই!
বাঃ, শুনে খুব ভাল লাগল। অনেক ধন্যবাদ ঘন্টুদা। এবার আমি বুঝতে পারছি ডাক্তার না হলেও আমি অনেক ভাল চাকরি করতে পারি জীবনে।
নিশ্চই পারিস নানটু। তোদের দুজনকেই অনেক শুভেচ্ছা।
(সমাপ্ত)
‘বিজ্ঞানের জীবিকা’ বিভাগের জন্য খবর পাঠাও/পাঠান [email protected]এ মেইল করে।
Wow, I was disheartend because i’m a student of pure chemistry…
But now i’m happy