মাত্রা বা ডাইমেনশন (dimension) কথাটা খুব একটা অপরিচিত নয়। আমরা প্রায়ই বলে থাকি আমরা ত্রিমাত্রিক স্থানে (এখানে স্থান অর্থে ভৌত স্থান, physical space) বসবাস করি। আবার একটুআধটু অপেক্ষবাদ (relativity) সম্পর্কে পড়ে ফেলা উৎসাহীরা বলবে আমাদের স্থান-কাল (space -time) চতুর্মাত্রিক [১]। কিন্তু এই মাত্রা জিনিসটা আসলে কি? মাত্রা কিসেরই বা হয়? কিভাবেই বা আমরা মাত্রা নির্ণয় করি?
প্রশ্নগুলো মোটেই সহজ নয়। অঙ্ক নিয়ে কখনো নাড়াচাড়া না করা মানুষও খুব সহজেই বলতে পারবে যে মেঝেতে সমান করে পেতে রাখা একটা কাগজের ওপরের তলটা দ্বিমাত্রিক। মেঝেটাও তাই, টেবিলের ওপরের তলটাও তাই, আবার ঘরের দেওয়ালগুলোও একই। কিন্তু ঘরটা নিজে ত্রিমাত্রিক। অন্যদিকে কাগজে আঁকা একটা রেখা অথবা একটা সুতোকে একমাত্রিক বলে ভাবা যায়। (যদিও আসলে সুতোটা ত্রিমাত্রিক। যত সরু সুতোই হোক না কেন তার প্রস্থচ্ছেদের একটা ক্ষেত্রফল আছে। কিন্তু সুতোটার দৈর্ঘ্যের তুলনায় তা খুবই কম। একই ভাবে খুবই সরু করে কাটা পেন্সিলে রেখা আঁকলেও সেই রেখার একটা বেধ আছে, তাই রেখা দ্বিমাত্রিক, যদিও বেধটা খুবই কম।)
কিন্তু মাত্রা সম্পর্কে আমাদের স্বাভাবিক ধারণা থেকে “মাত্রা কি?” এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়া বেশ শক্ত। যদি বলি দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা যে কটা পরিমাপ আছে মাত্রা তত, তখন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কি, এই প্রশ্ন আসবে। এই জিনিসগুলো মাত্রার সাথে এমনভাবেই জড়িয়ে যে শুধুমাত্র এইগুলো দিয়ে মাত্রার ধারণার সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়।
আমরা আলোচনার পরে বুঝতে পারবো যে দৈর্ঘ্য আসলে কোন বস্তুর একমাত্রিক পরিমাপ মাত্র। প্রস্থ আর উচ্চতাও আসলে দৈর্ঘ্যই, শুধু আলাদা দিকে। আবার ক্ষেত্রফল জিনিসটা দ্বিমাত্রিক পরিমাপ আর আয়তন হচ্ছে ত্রিমাত্রিক পরিমাপ। অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা কি, সেটা সঠিকভাবে বোঝাতে আমাদের ধরে নিতে হবে “মাত্রা”-র সংজ্ঞা আমরা জানি। সুতরাং “মাত্রা” কি, সেটা বোঝাতে গেলে যদি আমরা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বা উচ্চতা কি – সেই ধারণা ব্যবহার করি তাহলে আমরা চক্রাকার যুক্তির ফাঁদে পা দেবো (কিছুটা ওই ডিম আগে না মুরগি আগের মতো)।
একটা গোলকের উপরিতলের কথা ধরা যাক। ভাবার সুবিধের জন্য একটা বলের উপরের তলটা ভাবা যেতে পারে। গোলকটার পুরুত্ব শূন্য বলে কল্পনা করে নিন। সেটার মাত্রা কত? একটা গোলকের কোনটা দৈর্ঘ্য আর কোনটা প্রস্থ, সেটা বলা একটু গোলমেলে ব্যাপার। কিন্তু তার একটা ক্ষেত্রফল আছে। তাই গোলকটা দ্বিমাত্রিক, এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক এবং সেটা ঠিকও বটে। কিন্তু গোলকের উপরিতলটার উচ্চতা নেই কেন? গোলকটার নিজের তো একটা উচ্চতা আছে। গোলকের উপরিতলটা বাঁকা, গোলকটার মতই দেখতেও। তবু কেন বলছি যে ওই উচ্চতাটা গোলকটার, গোলকের উপরিতলটার নয়?
একটা ফাঁপা রবারের বলের কথা ভাবুন। তার গা-টাকে কিন্তু কোনভাবেই একটা দ্বিমাত্রিক সমতলে, যেমন একটা সমান করে পাতা কাগজে ধরিয়ে ফেলা যাবে না। তবুও তাকে দ্বিমাত্রিক বলছি কেন? একটা যুক্তি হল যে বলের গা-টার ক্ষেত্রফল থাকলেও ঘনফল নেই, তাই সেটা ত্রিমাত্রিক নয়। কিন্তু গোলকটার ঘনফল আছে অথচ গোলকের উপরিতলটার নেই, এর কারণ বোঝানো উচ্চতাটা কেন গোলকটার কিন্তু তলটার নয়, সেটা বলার মতই শক্ত। আর ক্ষেত্রফল-ঘনফলের এই যুক্তিটা অন্তত এইটুকু দেখাচ্ছে যে এই সহজ উদাহরণেও শুধু দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা দিয়ে মাত্রার সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। ক্ষেত্রফল, ঘনফল, এইরকম আরও নতুন জিনিসের ধারণাও লাগবে।
এমনিতেও আমাদের মাত্রার এই স্বাভাবিক ধারণা শুধুমাত্র তিনমাত্রা অবধিই কাজে দেবে কারণ আমরা নিজেরা ত্রিমাত্রিক জীব। তিনটের বেশী মাত্রা দেখতে পাওয়া তো দুরস্থান, মনে মনে দেখাও সম্ভব নয়। তাই তিনের বেশী মাত্রায় জ্যামিতি করার মত অঙ্ক যদি বানাতে হয়, তাহলে মাত্রা সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণাগুলোকে আরও নিখুঁত, নিশ্ছিদ্র কিছুতে দাঁড় করাতে হবে।
তিনের বেশী মাত্রায় জ্যামিতি করার মত অঙ্ক যদি বানাতে হয়, আমাদের মাত্রার ধারণাগুলোকে আরও নিখুঁত, নিশ্ছিদ্র কিছুতে দাঁড় করাতে হবে। আলোচনার পরে আমরা দেখব যে মাত্রার এমন ধারণাও সম্ভব যেখানে মাত্রা জিনিসটা যে পূর্ণ সংখ্যা হতে হবে, তাও নয়। যেকোন ধনাত্মক বাস্তব সংখ্যা হতে পারে!
লিনিয়ার বা রৈখিক স্থান
অঙ্কে মাত্রার ধারণা একটা নয়। আমরা প্রথমে শুরু করব সবচেয়ে সহজ ধারণাটা দিয়ে। সেটার পোশাকি নাম লিনিয়ার মাত্রা (linear dimension)। সহজ করে বললে, লিনিয়ার স্থানের মাত্রা বা লিনিয়ার স্পেসের ডাইমেনশন (dimension of a linear space)।
লিনিয়ার স্থান বা ভেক্টর স্থান কাকে বলে? এটা গণিতের একটা বিমূর্ত (abstract) ধারণা, কিন্তু অঙ্কের সব বিমূর্ত ধারণাই এক বা একাধিক মূর্ত ‘মডেল’ এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি। লিনিয়ার স্থানের ক্ষেত্রে সেই মূর্ত মডেলটা হচ্ছে সরলরেখা। আমাদের পরিচিত দ্বিমাত্রিক স্থানাঙ্ক জ্যামিতিতে ফেরত যাওয়া যাক। মূলবিন্দু দিয়ে যাওয়া কোন একটা সরলরেখাকে স্থানাঙ্ক জ্যামিতিতে কিভাবে লিখি? এইরকম একটা সমীকরণ দিয়ে:
যেখানে একটা বাস্তব সংখ্যা (Real Number)। এই সরলরেখার বিন্দুগুলোর সেটটাকে যদি আমরা নিই, তাহলে তার কিছু কিছু ধর্ম আছে। কিরকম? যদি সরলরেখার উপরে একটা বিন্দু হয় [২], তাহলে যেকোনো বাস্তব সংখ্যা এর জন্য ওই সরলরেখাটার ওপরেই আর একটা বিন্দু হলো । আবার ও যদি ওই সরলরেখার ওপরে দুটো আলাদা বিন্দু হয়, তাহলে বিন্দুটাও ওই সরলরেখার ওপরেই থাকবে।
এমন একটা যোগ আর গুনের সংজ্ঞা দেওয়া যাক যাতে সরলরেখার দুটো বিন্দুকে যোগ আর বাস্তব সংখ্যা দিয়ে গুন করে ফলাফলটা সরলরেখারই আরেকটা বিন্দু হয়। এমনিতে দুটো বিন্দুকে যোগ করার কোনো মানে হয়না, কিন্তু ওই দুটো ধর্মকে ব্যবহার করে একটা সরলরেখার বিন্দুগুলোর জন্য একরকম ‘যোগ’-এর সংজ্ঞা দিতে পারি। দুটো বিন্দু ও -র ‘যোগফল’ হবে বিন্দুটা। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি যে সরলরেখার ওপরে দুটো বিন্দুকে যোগ করলে যোগফল সবসময় ওই সরলরেখারই আরেকটা বিন্দু হবে। একইভাবে ওই সরলরেখার কোন একটা বিন্দুকে একটা বাস্তব সংখ্যা দিয়ে ‘গুণ’ করলে ওই সরলরেখার ওপরেই আর একটা বিন্দু পাব। এখানে ‘গুণ’-এর সংজ্ঞা অবশ্যই এইভাবে দেওয়া হচ্ছে: কোন একটা বাস্তব সংখ্যা আর কোন একটা বিন্দু -র ‘গুণফল’ হচ্ছে বিন্দুটা। এই দুটো ধর্ম থেকে সহজেই বার করতে পারব যে বিন্দুটাও ওই সরলরেখার ওপরেই আর একটা বিন্দু। অর্থাৎ, বাস্তব সংখ্যা দিয়ে গুন করে যোগ করলেও আবার ওই সরলরেখারই একটা বিন্দু পাব।
এই ধর্মগুলোরই সাধারণীকরণ করে বাস্তব লিনিয়ার স্থানের (real linear space) ধারণাটা আসে। সাধারণীকরণ করা বিষয়টা অঙ্কে খুবই জরুরী বিষয়। একরকমভাবে দেখলে অঙ্কের মোদ্দা বিষয়টাই এইটা। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিচিত উদাহরণের ক্ষেত্রে যদি আমরা দেখি যে তাদের সবগুলোরই কিছু বিশেষ ধর্ম আছে, তখন সেই ধর্মগুলোকে দিয়ে একটা নতুন গাণিতিক গঠন (mathematical structure)-এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়। এরকম বলা হয় যে কোনো জিনিসের এই ধর্মগুলো থাকলে সেই জিনিসটাকে বলা হবে অমুক। যে পরিচিত উদাহরণগুলো দিয়ে শুরু করেছিলাম, সেগুলো মূর্ত হলেও শেষের গাণিতিক গঠনটা হবে বিমূর্ত।
সাধারণীকরণ করার অর্থ হলো পরিচিত কিছু উদাহরণ থেকে কিছু বিশেষ ধর্মকে তুলে একটা বিমূর্ত পরিকাঠামো তৈরী করা। কেন এরকম করা হয়? কারণ একবার একটা ঠিকঠাক সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়ার পরে আমরা সরাসরি সেই বিমূর্ত ধারণাটা নিয়েই কাজ করব। সংজ্ঞায় বলে দেওয়া ধর্মগুলো থেকে সেই জিনিসটার আর কি কি ধর্ম থাকতেই হবে, তা উপপাদ্য হিসেবে প্রমাণ করব। যেহেতু প্রমাণ করার সময় ওই সংজ্ঞায় বলে দেওয়া ধর্মগুলো বাদে আর কিছুই আমরা ব্যবহার করিনি, তাই যা কিছু আমরা প্রমাণ করেছি সবই শুরুর উদাহরণগুলোর জন্য কাজ করবে। আলাদা আলাদা করে প্রতিটা উদাহরণের ক্ষেত্রে মিলিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই। এখানে সরলরেখার বিন্দুগুলোর এই যে দুটো ধর্ম আমরা দেখলাম, এইবার আমরা সেই ধর্মদুটো দিয়েই ‘বাস্তব লিনিয়ার স্থান’ নামের একটা বিমূর্ত গাণিতিক গঠনের সংজ্ঞা দেব। কিভাবে? আমরা বলব, বাস্তব লিনিয়ার স্থান আসলে একটা সেট , যাতে এর সদস্যদেরকে কোন একটা বাস্তব সংখ্যা দিয়ে এমনভাবে ‘গুণ’ করা যায় আর এর যেকোন দুটো সদস্যকে এমনভাবে ‘যোগ’ করা যায় যাতে ‘গুণফল’ আর ‘যোগফল’ দুইই এর সদস্য হয়।
আরও কিছু নিয়ম আছে যাতে এই ‘গুণ’ আর ‘যোগ’-টা সাধারণ গুণ আর যোগের মতই হয়। যেমন -তে এমন একজন সদস্য থাকতে হবে যার সাথে অন্য যেকোন সদস্যকে যোগ করলে তাকেই ফেরত পাব। এইরকম সদস্যকে বলে শূন্য ভেক্টর [৩]। ওপরের সরলরেখার উদাহরণে বিন্দুটা শূন্য ভেক্টর, কারণ । আবার যেকোন বিন্দুর জন্যে আর একটা বিন্দু থাকবে যার সাথে যোগ করলে শূন্য ভেক্টর পাব [৪]। যেমন । আবার যেকোন ভেক্টরকে ( এর সদস্যদের ভেক্টর বলে) এক দিয়ে গুণ করলে সেই ভেক্টরটা ফেরত পাব আর শূন্য ভেক্টরকে যেকোন বাস্তব সংখ্যা দিয়ে গুণ করলেই আবার শূন্য ভেক্টরই ফেরত পাব, ইত্যাদি। আরও কিছু প্রকরণগত নিয়মও আছে, যেমন তিনটে ভেক্টর যোগের ক্ষেত্রে কোন দুটোকে আগে যোগ করছি, তার উপর শেষ যোগফলটা নির্ভর করবে না, মানে [৫]। আবার কার সাথে কাকে যোগ করছি তার উপরও যোগফলটা নির্ভর করবে না, মানে ।
এবার কিছু উদাহরণ দেখা যাক। সরলরেখার উদাহরণটা আমরা আগেই দেখেছি, কিন্তু ওই যোগ আর গুণটার সাহায্যে ভাবলে আসলে গোটা কাগজটাই একটা লিনিয়ার স্পেস। কাগজের ওপরের যেকোন বিন্দুর স্থানাঙ্ক লিখলে দেখা যাবে উপরের প্রত্যেকটা ধর্মই খাটছে। যেমন, কাগজের উপর দুটো বিন্দুকে যোগ করলে তারা কাগজের উপরই থাকবে। কিন্তু আমাদের মাত্রা সম্পর্কে স্বাভাবিক ধারণায় আমরা বুঝি সরলরেখা একমাত্রিক, আর কাগজটা দ্বিমাত্রিক। তাই শুধু লিনিয়ার স্থান হিসেবে চিহ্নিত করলেই কাজ শেষ হলো না। প্রশ্ন হলো, লিনিয়ার স্থান থেকে মাত্রার ধারণাটা কিভাবে আসবে?
সরলরেখার ওপরে যেকোন একটা বিন্দু নেওয়া যাক, ধরা যাক বিন্দুটা। সরলরেখাটার ওপরে অন্য যেকোন বিন্দুকেই এই বিন্দুটার সাথে একটা বাস্তব সংখ্যাকে গুণ করে পাওয়া যাবে। এই কথাটা সহজেই মিলিয়ে নেওয়া যায়। আবার কাগজটার ওপরে যেকোন বিন্দুই আর ভেক্টরদুটোকে দুটো বাস্তব সংখ্যা দিয়ে গুণ করে যোগ করলেই পাওয়া যাবে। অর্থাৎ যদি কাগজের ওপরে যেকোন একটা বিন্দুর স্থানাঙ্ক হয় তাহলে ।
লিনিয়ার বা রৈখিক মাত্রা
যেকোন একটা লিনিয়ার স্থানের কথা ভাবা যাক, সে কাগজের উপর সরলরেখাই হোক কিম্বা গোটা কাগজটা। সেই স্থানের সংখ্যক সদস্য বা ভেক্টর নেওয়া যাক: । সেগুলোকে সংখ্যক বাস্তব সংখ্যা দিয়ে গুণ করে তারপর যোগ করে যে সমস্ত ভেক্টর পাব তাদেরকে ওই সংখ্যক ভেক্টরের লিনিয়ার কম্বিনেশন বলে। অর্থাৎ হচ্ছে এর একটা লিনিয়ার কম্বিনেশন, যেখানে হচ্ছে সংখ্যক বাস্তব সংখ্যা।
একটু আগে আমরা দেখলাম যে সরলরেখাটার ক্ষেত্রে গোটা সেটটাকেই একটা ভেক্টর -এর লিনিয়ার কম্বিনেশন হিসেবে লেখা যায়। আবার কাগজটার ক্ষেত্রে গোটা সেটটাকে দুটো ভেক্টর, আর -এর লিনিয়ার কম্বিনেশন হিসেবে লেখা যায়। আচ্ছা কাগজটার ক্ষেত্রে দুটোর পরিবর্তে কি একটা ভেক্টরের লিনিয়ার কম্বিনেশন হিসেবে লেখা সম্ভব? না, সম্ভব নয়। একটু ভাবলেই বোঝা যাবে, যে ভেক্টরই নিই না কেন, এটা সম্ভব নয়। ধরা যাক ভেক্টরটা নিলাম। তার লিনিয়ার কম্বিনেশন হিসেবে লেখা যাবে শুধু আর দিয়ে যাওয়া সরলরেখাটার ওপরের বিন্দুগুলোকেই। কাগজটার ওপরের বাকি বিন্দুগুলোকে ভেক্টরটা থেকে লেখা যাবে না।
বস্তুত এইটাই লিনিয়ার স্থানের মাত্রার ধারণা। কোন একটা লিনিয়ার স্থানের ক্ষেত্রে গোটা স্থানের সব বিন্দুকে সর্বনিম্ন যতগুলো ভেক্টরের লিনিয়ার কম্বিনেশন হিসেবে লেখা যায়, সেই সংখ্যাটাই ওই লিনিয়ার স্থানের মাত্রা। সরলরেখার মাত্রা এক, আর গোটা কাগজটার মাত্রা দুই। আবার আমাদের চারপাশের ভৌত স্থানের যেকোন বিন্দুকে , আর , এই তিনটে ভেক্টরের লিনিয়ার কম্বিনেশন হিসেবে লেখা যায়, আর তিনটের কম ভেক্টর দিয়ে কিছুতেই যায় না। তাই আমাদের ভৌত স্থানের মাত্রা তিন। সরলরেখাটা একমাত্রিক, কাগজটা দ্বিমাত্রিক আর ঘরটা ত্রিমাত্রিক, এই ধারণার সাথেও সেটা মিলছে।
পরবর্তী অংশে আমরা দেখব যে লিনিয়ার স্থানের গঠন নেই, এমন ক্ষেত্রেও মাত্রার ধারণা অন্য কোনভাবে দেওয়া যায় কিনা।
উৎসাহী পাঠকদের জন্য:
১) স্পেসটাইম বা স্থানকাল নিয়ে জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।
২) এখানে “ যদি একটু বিন্দু হয়” কথাটার মানে যদি একটা বিন্দুর স্থানাঙ্ক হয়। একটা বিন্দু একটা গাণিতিক ধারণা, গাণিতিক বস্তু, আর সেই বিন্দুর স্থানাঙ্ক সেই বিন্দুর একটা প্রতিরূপ (representation)। অঙ্কে বেশিরভাগ সময়ই একটা বস্তু আর তার কোন একটা প্রতিরূপের মধ্যে তফাৎ করা হয় না, বস্তুটাকে তার প্রতিরূপটা দিয়েই বোঝানো হয়।
৩) যোগ প্রক্রিয়াটার স্বাপেক্ষে শূন্য ভেক্টর হচ্ছে identity element, মানে যার সাথে অন্য যে কোন এলিমেন্ট নিয়ে প্রক্রিয়াটা করলে সেই এলিমেন্টটা ফেরত আসে। যেমন সাধারণ যোগের ক্ষেত্রে আইডেন্টিটি এলিমেন্ট হল , কারণ আর ।আবার সাধারণের গুণের আইডেন্টিটি এলিমেন্ট হল , কারণ । খেয়াল করুন দুবার করে লেখা হয়নি কিন্তু, কোনটা আগে আর কোনটা পরে, সেটা আলাদা। আইডেন্টিটি এলিমেন্ট তখনই বলব যখন তা দুদিক থেকেই এই শর্তটা মেনে চলে। এভাবে আলাদা করে লেখারও কারণ আছে, সাধারণ যোগ আর গুণের ক্ষেত্রে দুটোই একই, কারণ আর । কিন্তু যেকোন ধরণের বিমূর্ত ‘যোগ’ বা ‘গুণ’-এর ক্ষেত্রে মোটেই এমন হতে হবে তা নয়। দুটো ম্যাট্রিক্সের গুণ এমন একটা ‘গুণ’-এর উদাহরণ যা এইটা মেনে চলে না। যদি চলে, সেইটা একটা বিশেষ ধর্ম, সেই ধর্মটার নাম কম্যুটেটিভিটি (commutativity)।
৪) একে বলে inverse element। কোন এলিমেন্ট-এর সাথে তার ইনভার্স এলিমেন্টকে নিয়ে প্রক্রিয়াটা করলে আইডেন্টিটি এলিমেন্টকে ফেরত পাই। সাধারণ যোগের ক্ষেত্রে । তাই এর ইনভার্স এলিমেন্ট । সাধারণ গুণের ক্ষেত্রে কি হবে আমি বলে না দিয়ে ভেবে ফেলুন বরং। কোন বিশেষ এলিমেন্টের ইনভার্স বার করতে কোন অসুবিধে আছে কিনা সেটাও ভাবুন।
৫) , এই শর্তটার নাম অ্যাসোসিয়েটিভিটি (associativity)।