সম্পাদকমণ্ডলী, ‘বিজ্ঞান’
মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার আনন্দ ভাগ করে নিতে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকার। সারা পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে যে বিপুল কর্মযজ্ঞ ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত, তার খুঁটিনাটি যাতে বাংলাভাষী ছাত্র ছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমরা, অর্থাৎ ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রতিটি মানুষ, সেই চেষ্টাটুকুই করে চলেছি। পরীক্ষা পাশের জন্য নয়, বরং নিছক ভালো লাগা থেকে যদি পাঠকেরা বিজ্ঞান পড়ে, বিজ্ঞান নিয়ে ভাবে, সেটাই হবে ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকার সবচেয়ে বড় সাফল্য ।
সকলের সহযোগিতায় পত্রিকার ষষ্ঠ সংখ্যা প্রকাশ করতে পেরে আমরা আনন্দিত বোধ করছি।
এবারে আসি এই সংখ্যায় প্রকাশিত লেখাগুলির কথায়।
অসীম অনন্ত মহাকাশে ছড়িয়ে রয়েছে অগুনতি গ্রহ-তারা-ছায়াপথ। আর তার মাঝে একমেবাদ্বিতীয়ম আমাদের এই পৃথিবী। পৃথিবীর বাইরে অন্য গ্রহে প্রাণের সন্ধানে বহুদিন ধরেই নানা গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাণ কি শুধুই পৃথিবীতে – এ কৌতূহল আজকের নয়। চারপাশে প্রাণের এত কোলাহল দেখে মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কোথা থেকে এলো এত প্রাণ? আজ পৃথিবীব্যাপী বিজ্ঞানের এই জয়জয়কারের যুগে, কতটুকু জানতে পেরেছি আমরা এই পৃথিবীকে? এখনো কি কি জানা বাকি?
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরাকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের বাসের অযোগ্য করে তুলছি দিনের পর দিন। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, গ্লোবাল ডিমিং-এর পর বর্তমানে গ্লোবাল ব্রাউনিং নামক এক নতুন সমস্যা বিজ্ঞানীদের চিন্তায় ফেলেছে। দূষণের জেরে বেড়ে চলা পৃথিবীর গড় উষ্ণতা (গ্লোবাল ওয়ার্মিং), সূর্যালোকের ভূপৃষ্ঠে কম মাত্রায় পৌঁছানো (গ্লোবাল ডিমিং), বিশ্বব্যাপী স্বচ্ছ জলের ক্রমশ ঘোলা হয়ে যাওয়া (গ্লোবাল ব্রাউনিং) ইত্যাদি সমস্যার কারণে জীবজগতের অস্তিত্ব আজ সঙ্কটাপন্ন। প্রখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং-এর মত অনুযায়ী, মানবসভ্যতাকে আরও ১০০০ বছর বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই ধ্বংস হতে বসা গ্রহ থেকে পালানো ছাড়া আর পথ নেই। তাঁর মতে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমাদের মহাকাশ অভিযান চালিয়ে যেতে হবে পুরোদমে। কবিগুরুর ভাষায় বলতে গেলে ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে’ যদি আমরা খুঁজে বার করতে পারি আমাদের নতুন ঠিকানা, যদি ব্যাগপত্র গুছিয়ে পাড়ি দিতে পারি ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’র মাঝে, মানবসভ্যতার ইতিহাসে তা হবে এক অবিস্মরণীয় অবদান।
তারায় ভরা আকাশের কথা রয়েছে ছায়াপথ প্রবন্ধে।
আবার, এই তারাময় মহাকাশ থেকে প্রতি ক্ষণে ঝরে পড়ছে অনেক অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা – মহাজাগতিক বা কসমিক রশ্মি হিসাবে। এই কণাগুলোর অনেকেই আকাশ বাতাস আর আমাদের ফুঁড়ে চলে যাচ্ছে মহাবিশ্বের এপার থেকে ওপারে। কসমিক রশ্মির আবিষ্কর্তা অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী ভিক্টর হেস প্রয়াত হয়েছিলেন ডিসেম্বর মাসেই (১৯৬৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর)। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এই সংখ্যায় রয়েছে ভিক্টর হেস ও মহাজাগতিক রশ্মি লেখাটি।
প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান সমাজে সাফল্যের ইঁদুরদৌড়ে সামিল হতে গিয়ে মানুষ দিন দিন আরও একা হয়ে পড়ছে। এই ভয়ানক একাকীত্ব থেকে জন্ম নিচ্ছে শারীরিক, মানসিক নানাধরনের অসুখ। যার মধ্যে একটা নাম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে, সকালে খবরের কাগজ থেকে শুরু করে রাত্রে টেলিভিশন স্ক্রীন – তা হল ডিপ্রেশন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) – এর তথ্য অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে ৩৫ কোটি মানুষ এই অসুখে ভুগছেন। প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ ডিপ্রেশনজনিত কারণে আত্মহননের পথ বেছে নেন। এই সংখ্যায় আমরা প্রকাশ করেছি ডিপ্রেশন রোগের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত। প্রচলিত ভুল ধারণা, অর্থাৎ যে কোনো মনের অসুখ মাত্রেই যে ডিপ্রেশন নয়, সেটা সমাজের প্রতিটি মানুষের জানা বড় প্রয়োজন।
নদীর স্রোতের অনুকূলে নৌকার বেগ অথবা তৈলাক্ত বাঁশে বাঁদরের ওঠানামা – অঙ্ক দেখলে ভয় করে না এরকম ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা বোধহয় খুব কম নয়। সেই অঙ্কের সাথে কী করে বন্ধুত্ব পাতানো যায় তার হদিশ নিয়ে আমরা হাজির বিজ্ঞানের এই সংখ্যায় অঙ্ক কি শক্ত লেখাটিতে।
বর্তমান পৃথিবীর একটি জ্বলন্ত সমস্যা – যুদ্ধ। যুদ্ধ বলতে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে শয়ে শয়ে মানুষ, হাতে ধারালো মারণাস্ত্র। নিরীহ সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে, আত্মরক্ষার তাগিদে। ঠিক একইভাবে গাছও যুদ্ধ করে, নিজের প্রাণ বাঁচাতে। কে না জানে, গাছেরও প্রাণ আছে? রহস্যময়ী প্রকৃতির এ আর এক অজানা বিস্ময়, গাছেদের যুদ্ধ, যা এবার ধরা দিয়েছে ‘বিজ্ঞান’ এর পাতায়।
দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট ঘটনাগুলোর পেছনের বিজ্ঞানসম্মত কারণগুলো বুঝতে পারলে বিজ্ঞানকে আরও সহজে আমরা ভালোবাসতে পারবো, শুধু বইয়ের পাতায় নয়, বিজ্ঞান ছড়িয়ে আছে সর্বত্র, রাস্তাঘাট থেকে খেলার মাঠ। যাতায়াতের রাস্তায় নর্দমা খোঁড়াজনিত সমস্যা, দুর্গন্ধ ইত্যাদি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অতিপরিচিত ঘটনার আড়ালের বিজ্ঞানটা আমরা কজন জানি? কেন শুধুমাত্র রাতের অন্ধকারেই নর্দমার দুর্গন্ধ পাওয়া যায়, দিনের আলোয় নয়? জানতে হলে পড়তে হবে বিজ্ঞান পত্রিকার ষষ্ঠ সংখ্যা।
আশা রাখি ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকার এই সংখ্যা প্রিয় পাঠকদের নিরাশ করবে না। আপনাদের মতামত জানান আমাদের ইমেইল করে ([email protected]এ)।