আজ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ১২০-তম জন্ম বার্ষিকী। আধুনিক ভারতের তিনিই সম্ভবত প্রথম কীট সমাজবিদ্যার (insect ethology) পথিকৃৎ। ভারত তো বললাম কিন্তু বাংলাদেশের ঠিক কত জন মানুষ তাঁর নাম শুনেছেন? ১৯৩৬ সালে তাঁর মেছো মাকড়সার ওপর কাজটি প্রকাশিত হয়েছিল American Museum of Natural History-এর মুখপত্রে এবং ১৯৫১ সালে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন International Union for the Study of Social Insects-এর সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে। তাঁর অনেক কাজের মধ্যে পিঁপড়ের লিঙ্গ নির্ধারণের পরীক্ষা এবং তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিঃসন্দেহে অন্যতম। গোপালচন্দ্রের কাজের ব্যাপ্তি তাঁর লেখা পড়লেই বোঝা যায়। কিন্তু প্রথাগত শিক্ষা না থাকার দরুণ বঞ্চিত হয়েছেন যথোচিত সম্মান থেকে, সেক্ষেত্রে একমাত্র সান্তনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক DSc ডিগ্রীটি। যদিও জগদীশ চন্দ্র তাঁকে বসু বিজ্ঞান মন্দিরে কাজের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তবুও তিনি নিজেই কোথাও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গোপালচন্দ্রের বিজ্ঞান বিকাশে। গোপালচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনাকে এবং দৃষ্টি ভঙ্গীকে নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন জগদীশ চন্দ্র। সেই সময় জগদীশ চন্দ্র যদি গোপালচন্দ্রকে উচ্চতম বিজ্ঞান শিক্ষার অনুমতি দিতেন তাহলে গোপালচন্দ্র অনেক আগেই ভারতকে বিশ্বের জীববিদ্যার মানচিত্রে যোগ্য অধিকার এনে দিতে পারতেন।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচারে গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য়ের রচনার অবদান যেমন অনস্বীকার্য ঠিক তেমনি তাঁর লেখাগুলো বহু মানুষের মনের গভীরে পপুলার সায়েন্সের আগ্রহের বীজ ছড়িয়ে দেয় । Popular science নিয়ে কাজ করার বহু বছরের লালন করা সে স্বপ্ন কে বাস্তবায়িত করতে আজ আমরা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বিজ্ঞানী এবং বিজ্ঞানপ্রেমীরা জোট বেঁধে তৈরী করেছি বাংলা ভাষায় সকলের জন্য সহজ করে বিজ্ঞান প্রচারের জন্য একটি ওয়েবসাইট, বিজ্ঞান (www.bigyan.org.in)। সত্যি বলতে কি আমাদের এই ওয়েবসাইট এখন সদ্যজাত এক শিশু। বাংলা ভাষায় পপুলার সায়েন্স করতে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে অতীতে বাংলায় যাঁরা বিজ্ঞান প্রচার করে গেছেন তাঁদের প্রবন্ধ গুলোর যদি বৈদ্যুতিন সংরক্ষণ করা যায় তাহলে কেমন হয় ? কারণ বাঙালি তো আর শুধুই বাংলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় তার বিস্তার আজ বিশ্ব জুড়ে। প্রশ্ন, কার লেখা বা কোন লেখা দিয়ে শুরু করা হবে ? বাংলা মাধ্যমে লিখে বিজ্ঞানকে যাঁরা জনপ্রিয় করেছেন তাঁদের নাম স্মরণ করতে গেলেই যে নামটা প্রথমেই মনে আসে তিনি হলেন গোপলাচন্দ্র ভট্টাচার্য । গোপলাচন্দ্র ভট্টাচার্য, বাংলায় পপুলার সায়েন্সের শুধু প্রবাদ প্রতিম ব্যক্তিত্বই নন তিনি হলেন অন্যতম। তাঁর লেখা না পড়ে, না বুঝে, না জেনে, বাংলায় বিজ্ঞান প্রচার আসলে বর্ণমালা না শিখে মহাভারত পাঠের চেষ্টার মতই হাস্যকর। তাই আমরা সবাই মিলে গ্রহণ করেছি গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য়ের ১২০ তম জন্মবার্ষিকী, ২০১৪-এর ১লা অগাস্ট থেকে তাঁর রচিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ গুলোর বৈদ্যুতিন সংরক্ষণের এক প্রকল্প। গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য়ের বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা, তাঁর রচনা এবং বিজ্ঞানে তাঁর অতুলনীয় অবদান বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে পারলে তবেই আমাদের সে আশা সার্থক হবে নচেৎ বাংলার বিজ্ঞান এবং তার ইতিহাসের মূল একটা অধ্যায় রয়ে যাবে অধরা। গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের এই বৈদ্যুতিন সংকলনের জন্যে সম্মতি জানিয়ে এবং বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের পুত্রবধূ শ্রীমতি শুভা ভট্টাচার্য এবং “গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বিজ্ঞান প্রসার সমিতি”-র সম্পাদক শ্রী দীপক কুমার দাঁ এবং আকাশবাণী কলকাতার মানস প্রতিম দাস। আপনাদের কাছে আমাদের এই অলাভজনক সংস্থা “বিজ্ঞান”-এর বিশেষ আবেদন, আসুন সবাই মিলে সামিল হই বৈদ্যুতিন মাধ্যমে গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বিজ্ঞান প্রসারের এই জয়যাত্রায়।
গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের লেখাগুলির অনলাইনে সংরক্ষিত লেখা পড়তে পারবেন ইন্টারনেটে নীচের দেওয়া link-টিতে।