তাহলে নিজেই যাচাই করে দেখুন। অবিশ্বাসীদের মুখ বন্ধ করতে তার সমস্ত কাঁচা তথ্য বিজ্ঞানী মাইকেল মান এখন ইন্টারনেটে তুলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, যে মডেল ওই তথ্যের উপর চাপিয়ে উনি তার সিদ্ধান্তে পৌছেছেন, সেটাও পাওয়া যায় ওখানেই। হ্যাঁ, উনি স্বীকার করেন যে কার্বন ডাইঅক্সাইড সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কেই ওনার মডেল স্পষ্ট কথা বলতে পারে। আমাদের বায়ুমন্ডলের প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে মেঘের প্রভাব, সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু বলা যায় না। তাই, বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রার সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধি-র অঙ্কটা একদম আঁটোসাটো ভাবে কষা যায় না। নিখুঁতভাবে বলা যায় না, বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা ঠিক দ্বিগুন হলে পৃথিবী-র উপর কতটা তাপমাত্রা বৃদ্ধি আশা করা যায়। একটা নিম্ন আর উচ্চ সীমা বলতে হয়।
এইখানেই যত গোলমাল। IPCC বা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ — যারা কিনা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ করে — তাদের ২০১৩-র রিপোর্টে একটু পিছিয়ে এসেছিল। ওই নিম্ন সীমাটা দুই ডিগ্রী থেকে দের ডিগ্রীতে নামিয়ে এনেছিল। কেননা, গত দশ বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি-র হার কমে গেছিল । ব্যাস, আর যায় কোথা! অবিশ্বাসীদের হিড়িক পড়ে গেল। বাড়ছে না, তাপমাত্রা অতটাও বাড়ছে না। মাইকেল মান বলছেন, এক দশক খুব-ই কম সময়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি সম্পর্কে সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য। ওই দেড় ডিগ্রী-র হিসেবটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার মডেল ও হিসেব সমস্ত কাঁচা তথ্য সমেত ইন্টারনেটে তুলে উনি বাকিটা আমাদের সুবিবেচনা-র উপর ছেড়ে দিয়েছেন। ওনার হিসেব অনুযায়ী, ২০৩৬-এর মধ্যে তাপমাত্রা উনিশ শতকের মাঝামাঝির তাপমাত্রা থেকে দু ডিগ্রী বেড়ে যাবে। তারপর সামাল দেওয়া খুব-ই দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
কে এই মাইকেল মান ? আর উনিশ শতক-ই বা কোত্থেকে এলো ? এর উত্তর ২০০১ সালে ছাপা একটা গ্রাফের মধ্যে পাওয়া যায়। যে গ্রাফটা এখন হকি স্টিক গ্রাফ নামে প্রচলিত। এই গ্রাফে দেখা যায় যে উনিশ শতকের মাঝামাঝি অবধি পৃথিবীর উপর তাপমাত্রা খুবই মৃদু গতিতে নিম্নগামী ছিল। প্রায় এক হাজার বছর ধরে নিম্নগামী। হঠাৎ করে ওই সময় থেকে বেশ চোখে পড়ার মত গতিতে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। ওই আগের মৃদু গতির সাথে কোনো তুলনাই হয় না যার। এই গ্রাফ ও তার সাথে জড়িত সমস্ত তদন্তের পিছনে রয়েছেন মাইকেল মান আর তার সহকর্মীরা।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে কি হয়েছিল ? সেটা কি আর বলে দিতে হবে ? উপরের ছবিটা দেখুন তাহলে।
ছবি: তন্ময় দাস (TIFR, মুম্বাই)