গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের প্রথম বৈজ্ঞানিক রচনা
পচা গাছপালার আশ্চর্য আলো বিকিরণ করবার ক্ষমতা
কিছুক্ষণ আগে খুব এক পশলা বৃষ্টি নেমে গেছে। অন্ধকার রাত একটা রাস্তা দিয়ে চলছি সঙ্গে আলো নেই, দুই ধারে ছোট ছোট জংলী গাছ। হঠাৎ একটা জায়গায় দেখলাম যেন অসংখ্য জোনাকী জ্বলছে। সেখানকার অন্ধকার একটু বেশী, কারণ উপরের দিকটা গাছ গাছড়ায় ঢাকা। আরেকটু এগিয়ে গেলাম দেখি, সেই একই রকমের আলো জ্বলছে। রাস্তাটির দু-পাশেই ওই রকমের আলো আরও আশ্চর্য একটা আলোও একটু নড়েচড়ে না। সন্দেহ হলো-অতগুলি জোনাকী একেবারে চুপচাপ বসে আছে? কারণ কি? একটা লাঠি দিয়ে জঙ্গলটাকে খুব নেড়ে দিলাম। তবুও সেই আগেকার মতন স্থিরভাবে জ্বলছে, তখন মনে হলো ওগুলি তবে কেঁচোর রস-কারণ কেঁচোর রসও ঠিক ওইভাবে জ্বলে। লাঠি দিয়ে খুব জোরে ওই রকমের আলোসহ খানিকটা মাটি আঁচড়ে তুলে নিলাম। বাতির আলোতে গিয়ে দেখি আর কিছুই নয়, খানিকটা মাটি আর এক গাছা মরা দুর্বা। বাতির জোরালো আলোর কাছে ওটাই যে আলো দিচ্ছিল- সেটা মোটেই দেখা গেল না। অন্ধকারে নেওয়া মাত্রই আবার জ্বলন্ত ইলেকট্রিক বাতির কার্বন তারটার মত জ্বলতে আরম্ভ করল।
তখন ওই রকমের আরো কতগুলি আলোর টুকরা সংগ্রহ করে দেখি যে, সেগুলো কেবলি দুর্বাঘাস নয়, পচা আম-পাতা, কাঁটাল- পাতা, আনারস-পাতা আরো গাছের ছোট্ট পচা ডালপালা অনেকই আছে। সবগুলির আলো একই রকমের খুব সুন্দর। সেগুলিকে লতা, পাতা, ফুল, ফল, মালা ইত্যাদি অনেক রকমে সাজিয়ে রেখেছিলাম-সারা রাত খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল। কিন্তু তার পরের দিন রাত্রিতে দেখি-তারা আর মোটেই আলো দেয় না। কারণ অনুসন্ধানে বোঝা গেল বৃষ্টির জলেই ভিজে ওগুলি এমন সুন্দর সুন্দর আলো দিতে পেরেছিল আবার সেগুলিকে জলে ভিজিয়ে দিতাম। খানিক পরে দেখি সেই রকমের দিব্বি আলো। একবার মনে হয়েছিল ফসফরাসের মত কোন জিনিস নিশ্চয়ই এতে আছে, কিন্তু তা থাকলে শুকনো পাতাই বা আলো দিতে পারবে না কেন ? তার পরে আরও বিশেষ করে দেখলাম-সব জায়গায় পচা জিনিসই ভিজলে ও রকম আলো দিতে পারে না। কেবল যেগুলি গাছপালা বা ঝোপঝাড়ের নীচে ছায়ায় থেকে থেকে পচে, তারাই অমন আলো দিতে পারে।
কিছু দিন পরে একদিন শুনলাম একটা অন্ধকার বাগানে নাকি মাঝে মাঝে প্রায়ই আলেয়ার আলোর মত খুব বড় একটা আলো দেখা যায়। কৌতূহলের খাতিরে একদিন রাত্রি ১০।। টার সময় সেটা দেখতে গেলাম। সেদিনও বিকেল বেলায় খুব ভারি বৃষ্টি হয়ে গেছে। দেখলাম সত্যি সত্যিই আগুনের কুন্ডের মত একটা স্থির আলো জ্বলছে। জন দুই সেখানটায় গিয়ে দেখি একটা পুরানো গাছের গোড়া। শিকড়ের দিকটা বৃষ্টির জলে ভিজে তখন আলো বের হচ্ছিল। ওই পচা লতাপাতার মত ছায়ার থেকে পচেছিল এ ব্যাপারে প্রকৃত রাসায়নিক তথ্যটা প্রবাসীর মারফৎ সবিস্তারে কেউ জানাতে পারলে আমাদের কৌতূহল চরিতার্থ হতো। কারো পরীক্ষার দরকার হলে ওরকম দু-এক খন্ড আলো-দেওয়া পচা পাতা বা আর কিছু পাঠাতে পারি।
শ্রী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য
লোনসিংহ , ফরিদপুর
___________________
প্রবাসী, পৌষ ১৩২৬
আপনাকে ইমেইল শুধুমাত্র Bigyan.Org.In এর খবরাখবর পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হবে। আপনার তথ্য আমাদের কাছে সুরক্ষিত।