এই অনিষিক্ত ডিম থেকেই পুরুষ-মৌমাছি উৎপন্ন হয়ে থাকে। যৌন-মিলনের পর ডিম্ব-নিষেককারী রস ডিম্বাধারে না গিয়ে ডিম্বনলের সঙ্গে সংযুক্ত একটি নির্দিষ্ট থলিতে সঞ্চিত হয়। ডিম বাইরে নির্গত হবার সময় ওই নলের তা নিষিক্ত হয়ে থাকে। কেউ কেউ অনুমান করেন, রানী যখন ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে ডিম পাড়বার জন্যে শরীরের পশ্চাদ্ভাগ প্রবেশ করিয়ে দেয় তখন চাপ লাগবার ফলে অভ্যন্তরস্থ থলি থেকে পুং-রস নির্গত হয়ে ডিমটিকে নিষিক্ত করে দেয়। পুরুষ-মৌমাছিদের প্রকোষ্ঠ অপেক্ষাকৃত বড় বলে তাতে ডিম পাড়বার সময় চাপ লাগে না। কাজেই পুং-রস থলি থেকে নির্গত না হবার ফলে ডিমটি অনিষিক্তভাবেই বহির্গত হয়। এই অনিষিক্ত ডিম থেকে পুরুষ-মৌমাছি জন্মগ্রহণ করে থাকে।
সাধারণত আমরা দেখতে পাই, জীবজগতে পিতা ও মাতার সহযোগে সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং সেই সন্তান পিতা অথবা মাতার অনুরূপই হয়ে থাকে। জীবতত্ত্বের গোড়ার কথা আলোচনা করলে দেখা যাবে – আদি জীব-কোষে পিতা ও মাতার বৈশিষ্ট্য অন্তর্নিহিত থাকে। পুং-বৈশিষ্টসমূহ প্রাধান্য লাভ করলে ভ্রূণে ক্রমশ পুং-লক্ষণসমূহ আত্মপ্রকাশ করে, অন্যথায় স্ত্রী-লক্ষণসমূহ বিকশিত হয়ে থাকে। আদি জীব-কোষে স্ত্রী ও পুং বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব থাকে বলেই স্ত্রী অথবা পুং-সন্তান উত্পন্ন হতে পারে। কিন্তু মৌমাছিদের ক্ষেত্রে জীবের জন্মরহস্যের মূল তত্ত্বের দিক থেকে বিচার করলে তাদের স্ত্রী ও পুরুষ উত্পত্তির ব্যাপারটাকে কিরূপে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে ? পুরুষের সম্পর্ক থাকলেই সেখানে স্ত্রী-সন্তান উত্পন্ন হবে-অথচ পুরুষ-সংস্রব না থাকলে সেখানে কেবলই পুরুষ সন্তান উত্পন্ন হবে – এ অতীব বিস্ময়কর ব্যাপার। পুরুষ-সংস্রব বর্জিত স্ত্রী-গর্ভস্থ ডিম্ব অথবা জীব-কোষে পুরুষের বৈশিষ্ট্যসমূহ কেমন করে আত্মপ্রকাশ করে ? বিভিন্ন জাতীয় প্রাণীর দেহ-কোষ, বিশেষ করে জীব কোষে অবস্থিত ‘ক্রোমসোমে’র কথা আলোচনা করলেই এর সহজ সমাধান হতে পারে। মানুষ হতে আরম্ভ করে প্রায় অধিকাংশ প্রাণীর পুরুষদের শরীরে যতগুলি পুং-কোষ উত্পন্ন হয়, তার অর্ধসংখ্যক কোষগুলিতে X এবং বাকি অর্ধেকে থাকে Y-ক্রোমোসোম। স্ত্রীদের ডিম্বকোষের প্রত্যেকটিতেই থাকে X-ক্রোমোসোম। অর্থাৎ ক্রোমোসোমের দিক থেকে বলতে গেলে-পুরুষেরা YX এবং স্ত্রীরা XX। পুং-কোষের X-ক্রোমোসোম ডিম্বকোষের X-ক্রোমোসোমের সঙ্গে মিলিত হলে সন্তান হবে স্ত্রী এবং পুংকোষের Y – ক্রোমোসোম ডিম্বকোষের X-ক্রোমোসোমের সঙ্গে মিলিত হলে সন্তান হবে পুরুষ। Y – ক্রোমোসোমটাকেই পুং-বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বলে মনে করা হয়। মৌমাছির ক্রোমোসোমও যদি এই অবস্থায় থেকে থাকে তবে অনিষিক্ত ডিম্ব থেকে পুং-মৌমাছি উত্পন্ন হতে পারে না। কাজেই মনে হয়, পাখি, প্রজাপতি প্রভৃতি কয়েক জাতীয় প্রাণীদের মতো পুং-মৌমাছি-XX এবং রানী-মৌমাছি -XY ক্রোমোসোম সমন্বিত। মৌমাছির সমগোত্রীয় অন্যান্য প্রাণী সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষনার ফলে অন্তত এই ধারণাই সমীচীন বোধ হচ্ছে।
চৈত্র, ১৩৪৯
প্রবাসী