চাকের অধিকাংশ মৌমাছিই দিনের বেলায় ফুলে ফুলে মধু আহরণে ব্যস্ত থাকে। তারা যে কেবল মধুই সংগ্রহ করে তা নয় ; সঙ্গে সঙ্গে পিছনের ঊরুদেশের চিরুণীর মতো যন্ত্রের সাহায্যে যথেষ্ট পরিমাণে ফুলরেণুও সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে আসে। ফুলের ওপর থেকে একটা মৌমাছি ধরলেই দেখা যাবে – তার পিছনের পায়ের মধ্যস্থলে হলুদ বর্ণের ফুলের রেণুগুলি যেন কাইয়ের মত সঞ্চিত রয়েছে। কতকগুলি মৌমাছি আবার বাসার জন্য জল সংগ্রহেই ব্যাপৃত থাকে। তারা ফুলের ওপর না বসে সোজা কোনোও জলাশয়ের উপর উড়ে যায়। জলাশয়ের ভাসমান জলজ পত্রাদির উপর বসে প্রচুর র্পরিমাণে জল শুষে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। গরু-ছাগল যেমন করে জলপান করে, সারবন্দিভাবে ভাসমান শালুক বা পদ্মপাতার কিনারায় বসে অনেক সময় তাদের জলপান করতে করতে যায়। এতদ্ব্যতীত কতকগুলি মৌমাছি সর্বদাই চাকের মধ্যে অবস্থান করে। কোন সময়েই সেগুলিকে বাসা ছেড়ে বাইরে যেতে দেখা যায় না। এদের মধ্যে কতকগুলি প্রকোষ্ঠ নির্মাণ, কতকগুলি বাচ্চা প্রতিপালন এবং কতকগুলি মধু ও চাক রক্ষার কার্যে নিযুক্ত থাকে। পাহারাদার মৌমাছিগুলি সর্বদা সতর্কভাবে বাসার চতুর্দিকে ঘুরে বেড়ায় পূর্বেই বলা হয়েছে, সময় সময় বাসার মৌমাছিরা অপর বাসায় লুঠতরাজ করবার চেষ্টা করে থাকে। তাছাড়া অনিষ্টকারী বিবিধ পোকামাকড়ের অভাব নেই। তারা এদের বাচ্চা, ডিম ও মধুর লোভে, এমন কি – বাসার মোম খাবার জন্যেও আক্রমণ করতে কসুর করে না। এক জাতীয় ‘মথ’ আছে, যাদের শোঁয়াপোকারা মোম খেয়েই জীবনধারণ করে। মৌচাকের গন্ধ পেলেই এক জাতীয় শোঁয়াপোকা দল বেঁধে সেখানে উপস্থিত হয় এবং মুখ থেকে সূক্ষ্ম সুতা বের করে পাতলা কাগজের মতো জাল বুনে বাসার নিচের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরূপে বাসার অধিকাংশই ক্রমশ সুতার জালে ঢেকে ফেলে। প্রথম থেকে বাধা দিতে না পারলে সেগুলিকে প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই এরা চাকে প্রবেশ করবার সকল প্রকার সম্ভাব্য পথে খাড়া পাহারা মোতায়েন করে। এই প্রহরীরা এতই সতর্ক যে, নিজেদের দলের যে কেউ বাইরে থেকে বাসায় উপস্থিত হোক না কেন, পরীক্ষ্যা না করে তাকে ছেড়ে দেয় না। খূব সম্ভব শরীরের গন্ধ থেকেই এরা স্বজাতীয় বা বিজাতীয় দলের মৌমাছি বলে চিনতে পারে। কতকগুলি প্রহরী আবার চাকের অতি প্রয়োজনীয় জায়গা বিশেষে অবস্থান করে অতি দ্রুতগতিতে ডানা কাঁপাতে থাকে। বাসার নিকটে গেলেই একসঙ্গে অনেকগুলি মৌমাছির ডানা কাঁপানোর ঝন্ ঝন্ শব্দ প্রাণে একটা আতঙ্কের সঞ্চার করে।
চাকের যাবতীয় মৌমাছিকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা যায় – এক কর্মপটু শ্রমিক অর্থাৎ কর্মী ; ওপর দল সম্পূর্ণ কর্মবিমুখ। রানী ও পুরুষ মৌমাছিরাই শেষোক্ত ভাগে পড়ে। চাক নির্মাণ, বাচ্চা প্রতিপালন থেকে সুরু করে বাসা রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ শ্রমিকেরাই করে থাকে। পুরুষ মৌমাছি প্রধানত আহার-বিহারেই মত্ত থাকে। রানী মৌমাছির প্রধান কাজ মৌমাছির বংশবৃদ্ধি করা। পুরুষেরা প্রায়ই দিনের শেষভাগে উচ্চ শব্দ করে বাসা থেকে উড়ে যায় এবং কিছুক্ষণ প্রমোদ ভ্রমণ করে বাসায় ফিরে আসে। প্রত্যেক চাকেই একটি মাত্র পরিণত বয়স্ক রানী মৌমাছি দেখতে পাওয়া যায়। কদাচিৎ এর ব্যতিক্রম লক্ষিত হয়ে থাকে।