এই প্রবন্ধে আমি ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা, আয়ুর্বেদ, রসায়ন ও ধাতুবিদ্যার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। এই আলোচনার উদ্দেশ্য এটা দেখানো যে কিভাবে বিজ্ঞানশিক্ষা থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক বিজ্ঞানচর্চার অবক্ষয় প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান ও সভ্যতার পতন ঘটিয়েছে। প্রথমেই বলে নিতে চাই, যদিও এই লেখার বিষয় আর আমার গবেষণার বিষয় এক নয়, তবে একজন ভারতীয় বৈজ্ঞানিক হিসেবে ভারতের বিজ্ঞান চর্চার অবক্ষয় অবশ্যই আমার জন্য চিন্তার বিষয়। তাই আমি কয়েকজন বরেণ্য ভারতীয় বৈজ্ঞানিকের উদ্ধৃতির উপর ভিত্তি করেই এই বিষয়টি উপস্থাপন করতে চলেছি।
লেখার প্রথম পর্বে আমি আলোচনা করবো প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানের খুব কাছাকাছি দুটি শাখা, যথাক্রমে রসায়ন এবং ধাতুবিদ্যার ইতিহাস নিয়ে।
১৯২৬ খ্রীস্টাব্দের ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের অধিবেশনে পদার্থবিদ্যা ও গণিত বিভাগের সভাপতি মেঘনাদ সাহা তাঁর ভাষণে, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার রেওয়াজ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নবম শতাব্দীর একটি পুঁথি থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করেন। ধুদুকনাথ রচিত ‘রসেন্দ্র চিন্তামণি’ নামক এই সংস্কৃত রসায়ন পুঁথিটির কথা তিনি জানতে পারেন তাঁর শিক্ষক স্বনামধন্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়-এর কাছ থেকে।
“আমি কোনো মহাপন্ডিতের কথা উদ্ধৃতি করছি না, কিংবা শাস্ত্রে লিখিত কোনো সূত্রের উল্লেখও করছি না। আমি নির্ভীকভাবে কেবলমাত্র সেগুলোই লিপিবদ্ধ করছি যেগুলো আমি আমার অগ্রজগণের সামনে আমার নিজের হাতে করে দেখেছি। প্রকৃত শিক্ষক তারাই যারা শুধুমাত্র শিক্ষাদান করেন না, যা কিছু শেখান তা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেও দেখান। যোগ্য ছাত্র তারাই যারা, শিক্ষকের কাছে বিদ্যালাভের পর, নিজে নিজেই পরীক্ষাগুলি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে। বাকিরা মঞ্চাভিনেতা মাত্র।”
কেন নবম শতাব্দীর এই রসায়নবিদ বিজ্ঞানশিক্ষায় পরীক্ষার ভূমিকা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে এরকম কঠোর শব্দের আশ্রয় নিলেন? কারণ ভারতবর্ষে ইতিমধ্যেই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার সংস্কৃতিতে অবনতির লক্ষণ দেখা দিচ্ছিল। তার ফলে বিজ্ঞানের অগ্রগতিও রুদ্ধ হতে শুরু করেছিল।
মেঘনাদ সাহা ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় শুধু স্বনামধন্য বিজ্ঞানীই ছিলেন না, তাঁরা ভারতবর্ষে নবজাগরণের অন্যতম স্তম্ভবিশেষও ছিলেন। প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার গুণাবলী ও সীমাবদ্ধতা, দুইয়ের ব্যাপারেই তাঁরা ভালোভাবে জানতেন। নবীন ছাত্রদের কাছে তাঁরা সীমাবদ্ধতাগুলি তুলে ধরার চেষ্টা করছিলেন যাতে ছাত্ররা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
মেঘনাদ সাহা তাঁর বক্তৃতায়, ‘বিজ্ঞানে মঞ্চাভিনেতা’র উপমাটিতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এই প্রবণতা যে আখেরে বিজ্ঞানের গতিকে স্তব্ধ করে দিতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি সাবধানও করে দিয়েছিলেন [১]। ড: সাহার আশঙ্কা কতখানি ঠিক সেটা বুঝতে হলে আমাদের ভারতীয় বিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা-নির্ভর শাখাগুলির ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে।
রসায়নের পূর্বসূরি: অ্যালকেমি
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মতে [২], নবম শতাব্দীর পর থেকে ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্র মূলত অ্যালকেমি বা ধাতুর শুদ্ধিকরণের চর্চার উপরই দাঁড়িয়ে ছিল। একমাত্র ব্রাহ্মণদের বাদ দিয়ে, বাকি অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা অ্যালকেমির চর্চা করতেন, কারণ অ্যালকেমি চর্চা ছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভর।
এই কারণে অ্যালকেমির পথিকৃৎ হিসেবে অব্রাহ্মণ কিছু লোকের নাম পাওয়া যায়। যেমন, একাদশ শতকে আলবেরুণীর লেখা বইয়ে নাগার্জুনা নামে এমন একজনের উল্লেখ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে অবশ্য জানিয়ে রাখি, এই একই নামে বেশ কয়েকজন থাকতে পারেন। কারণ সপ্তম শতাব্দীতে Hsuan-tsang-ও নাগার্জুনা নামে ৫-৬ শতাব্দী আগেকার একজন বৌদ্ধ অ্যালকেমিবিদের নাম করেছেন।
অ্যালকেমির শিক্ষাদান এবং চর্চা হতো নালন্দা, বিক্রমশীলা ও উদন্তপুরার বৌদ্ধবিহারগুলিতে। ১২০০ শতাব্দীতে বক্তিয়ার খিলজী এগুলি ধ্বংস করে দিলে সেখানকার অ্যালকেমিবিদরা তিব্বত ও দাক্ষিণাত্যে পাড়ি দেন [৩]। ভারতীয় সমাজের মূলস্রোতে ব্রাহ্মণদের মধ্যে আলকেমির চর্চা না থাকায়, এর পরে ভারতের বিজ্ঞানের ইতিহাস থেকে অ্যালকেমি চিরতরে হারিয়ে যায়।সমাজের বুদ্ধিজীবি অংশের কৃপাধন্য না হয়েও, অ্যালকেমি গোটা মধ্যযুগ জুড়ে টিকে ছিল। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মতে আলকেমি-ই ছিল আমাদের আধুনিক রসায়নবিদ্যার পূর্বসুরি।
ধাতুবিদ্যার জগতে ভারতের কীর্তি
প্রাচীন ভারতে ধাতুবিদ্যার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করলেও একই ছবি দেখা যায়। ঐতিহাসিক ভাবে ভারতবর্ষ লোহা রপ্তানীকারী দেশ হিসেবে বিখ্যাত ছিল। প্রাচীন ভারতের ধাতুবিদদের প্রতিভার জ্বলন্ত নিদর্শন হলো দিল্লী (খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতক) ও ধারের (খ্রিষ্টীয় দশম শতক) লৌহস্তম্ভদুটি। দিল্লীর স্তম্ভটি প্রথমে বিদিশায় ছিল। পরে এটি দিল্লীতে স্থানান্তরিত হয়। এটি লম্বায় ৭ মিটার, ওজনে ৬.৫ টন। স্তম্ভটি ৯৮% বিশুদ্ধ লোহা দিয়ে তৈরী। জং প্রতিরোধের জন্য এর সাথে উচ্চ পরিমাণে ফসফরাস মেশানো হয়েছিল।
সাধারণভাবে এটা জানা যায় যে এই মাপের ও এই বিশুদ্ধতার লৌহস্তম্ভ বানানো অন্য কোন দেশের পক্ষে সম্ভব ছিল না – অন্তত অষ্টাদশ শতকের শিল্পবিপ্লবের আগে পর্যন্ত্য। ধারের স্তম্ভটি ৭ টনের থেকে একটু ভারী আর লম্বায় দিল্লীর স্তম্ভটির দুই গুণ। তবে এটি এখন তিন টুকরো হয়ে গেছে। জং প্রতিরোধের জন্য দিল্লীর স্তম্ভটির মত এটিতেও উচ্চ পরিমাণে ফসফরাস মেশানো হয়েছিল [৪]।
বিশুদ্ধ লোহার উৎপাদন করার মতোই, ভারতীয় ধাতুবিদ্যার ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ মাইলফলক ছিল ইস্পাত আবিষ্কার। ৬০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে দাক্ষিণাত্যে লোহার অঙ্গারীকরনের (carbonization) দ্বারা ইস্পাত তৈরী করা হত [৩]। প্রাচীন ভারতে তৈরী এই ইস্পাত বিশ্বব্যাপী রপ্তানিও করা হত। এই উন্নত মানের ইস্পাত প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার অন্যান্য শাখাকেও প্রভাবিত করেছিল। তাদের মধ্যে আয়ুর্বেদ এবং অ্যালকেমি অন্যতম।
প্রাচীন ভারতে আয়ুর্বেদের সাথে অ্যালকেমী এবং ধাতুবিদ্যার এক নিবিড় ত্রিকোণ সম্পর্ক ছিল। আমরা এই লেখার তৃতীয় পর্বে আয়ুর্বেদ-এর ইতিহাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো। এখানে শুধু জানিয়ে রাখি, যে দেহ সিদ্ধি ও লোহা সিদ্ধি নামে আলকেমির দুটি শাখা ছিল। প্রথম শাখাটিতে আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্রের জন্য প্রয়োজনীয় নানাপ্রকার ভস্মের উৎপাদনে ব্যবহৃত রসায়নের চর্চা করা হত। আর দ্বিতীয়টিতে বিভিন্ন ধাতু গলানো ও বিশেষ কিছু ধাতু (যেমন ইস্পাত) উৎপাদনের পদ্ধতি নিয়ে চর্চা করা হত। দ্বিতীয় শাখাটি আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রোপচার যন্ত্র তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। বলা হয় যে প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক সুশ্রুতের অস্ত্রোপচার যন্ত্রগুলি দাক্ষিণাত্যের ইস্পাত দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দী পর্যন্ত বিজ্ঞানের এই তিন শাখার একসাথে বিকাশ ঘটে ভারতে।
ধাতুশিল্প হারিয়ে গেল কিভাবে
এই অবস্থা থেকে কিভাবে খ্রিষ্টীয় দশম শতকের পর ভারতীয় লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অবনতি হলো, তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় অধ্যাপক বি. প্রকাশের লেখা রচনায় [৫]। খ্রিষ্টীয় একাদশ ও দ্বাদশ শতকে ভারতীয় ধাতুবিদ্যার দ্রুত অবনতি ঘটে যখন মধ্য এশিয়ার গজনী ও ঘোড় অঞ্চল থেকে হানাদাররা ভারতবর্ষ আক্রমণ করে। এই হানাদাররা ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্প ধ্বংস করে দেয় ও সেখানকার দক্ষ শ্রমিকদের দাস বানিয়ে নিয়ে যায় নিজেদের অস্ত্র গড়বার জন্য।
পরবর্তীকালে মুঘল আমলে ভারী অস্ত্রশস্ত্র যেমন ২০-৪০ টনের কামান উৎপাদনের মাধ্যমে ভারতীয় ধাতুবিদ্যা নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। মাঝে মাঝে বাধা পেলেও, মোটামুটি নিয়মিতভাবেই মধ্যযুগে, দাক্ষিণাত্য থেকে আরবদেশে উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্র তৈরীর জন্য ইস্পাত রপ্তানি করা হত। বিখ্যাত দামাস্কাস তরবারি এই ইস্পাত দিয়েই তৈরী হয়েছিল [৩]। তবে এই দুই জায়গার লৌহ এবং ইস্পাত শিল্প-এর অবক্ষয় হয় অষ্টাদশ শতকের মধ্যেই। এই সময় ব্রিটিশ গভর্ণমেন্ট ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পকে বঞ্চিত করে এখান থেকে লৌহ আকরিক ব্রিটেনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তই ভারতবর্ষের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের উপর অন্তিম আঘাত হানে।
আগামী পর্বে আমি আলোচনা করবো ভারতের জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাস নিয়ে, এবং দেখবো ঠিক কিভাবে প্রাচীন ভারতে জ্যোতির্বিদ্যার ক্রমবিকাশ ঘটে, এবং কিভাবেই বা তার অবনতি হয়।
(চলবে)
(প্রচ্ছদের চিত্র: দিল্লীর লৌহস্তম্ভ)
(মূল লেখাটি ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছিল। এখানে দেখতে পারেন। লেখাটি বাংলায় অনুবাদ করেছে আবির দাস ও সোমনাথ বক্সী।)
সুত্রঃ-
১। M. K. Pal, Key Note Address : Proc. National Symp. on Scientific Contributions of Samanta Chandra Sekhar to Astronomy, Allied Publishers (2006).
২। P. C. Ray: History of Chemistry in Ancient and Medieval India, Indian Chemical Society, Calcutta (1956).
৩। Wikipedia, the free encyclopedia on the internet.
৪। R. Balasubramanian, Indian J. History Sci. 37, 115 (2002).
৫। B. Prakash, Indian J. History Sci. 46, 381(2011
লেখক পরিচিতি:
এই লেখাটির সম্পাদনা চলাকালীন অধ্যাপক ডি.পি. রায় চলে গেলেন আমাদের কাছ থেকে। তার সম্বন্ধে কিছু কথা বলছে টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ-এর ড: বাসুদেব দাসগুপ্ত।
প্রফেসর ও বিজ্ঞানী দুর্গা প্রসাদ রায় (২৯ জুলাই, ১৯৪১ – ১৭-ই মার্চ, ২০১৭) অনেকের কাছেই দুর্গাদা বা ডি পি বলে পরিচিত ছিলেন। নিউট্রিনো বিষয়ক গবেষণায় তিনি ছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন পথিকৃৎ। তাঁর সহযোগিতায় যে ডাটা-এনালিসিস পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছিল, তার হাত ধরেই ‘নিউট্রিনো অসিলেশন’-এর ডাটা বিশ্লেষণ করে প্রায় ৩২ বছর পুরোনো ‘সোলার নিউট্রিনো ডেফিসিট’ সমস্যাটির সমাধান সম্ভব হয়, যা কিনা নিউট্রিনো গবেষণার জগতে ভারতকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। এছাড়াও টেট্রা-, এবং পেন্টা-কোয়ার্ক নিয়ে গবেষণা, টপ কোয়ার্ক এবং অন্যান্য সুপারসিমেট্রিক কণার বিষয়ে গবেষণায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। গবেষণার প্রতি মনোভাবের দিক থেকে দেখতে গেলে বলা যায়, তিনি গবেষণায় অনুমান-ভিত্তিক পর্যালোচনার চাইতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ভিত্তিক পদ্ধতিতেই বেশি জোর দিতেন। এবিষয়ে নিজের সম্পর্কে তিনি বলতেন ‘আই এম এ পুওর ফেনোমেনোলজিস্ট।’
ডি. পি.-র গবেষণা-জীবন দীর্ঘ ও স্বতন্ত্র। তাঁর গবেষণা শুরু হয় টি. আই. এফ. আর. মুম্বাইতে প্রফেসর বি. এম. উদগাওকর-এর ছাত্র হিসেবে, যিনি নিজে প্রফেসর হোমি জাহাঙ্গীর ভাবার ছাত্র ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি টি. আই. এফ. আর. থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৬ থেকে শুরু করে ১৯৬৯ পর্যন্ত্য তিনি যথাক্রমে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া, সার্ন (CERN), জেনেভা, এবং ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোতে গবেষণা করেন। এর পর ১৯৭৬ সালে টি. আই. এফ. আর. মুম্বাইতে রিডার পদে যোগদান করার আগে তিনি ৪ বছর ব্রিটেনের রাদারফোর্ড আপেলটন ল্যাবরেটরিতে, এবং ২ বছর বিশ্ব ভারতীতে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৬ থেকে শুরু করে ২০০৬ পর্যন্ত্য টানা ৩০ বছর প্রফেসর ডি পি রায় টি. আই. এফ. আর. মুম্বাইতে গবেষণার কাজ করেন। এর পর ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল অবধি টি. আই. এফ. আর. -এ হোমি জাহাঙ্গীর ভাবে সেন্টার ফর সায়েন্স এডুকেশন-এ ডি এ ই রাজা রামান্না ফেলো হিসেবে, এবং পরে ইনসা সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
ভারতবর্ষে পার্টিকল ফিজিক্স নিয়ে গবেষণা-রত বিজ্ঞানীদের অনেকেই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। টি. আই. এফ. আর.-এ থাকাকালীন তিনি পার্টিকল ফিজিক্স-এর বহু প্রজন্মকে উৎসাহ, প্রশিক্ষণ, এবং পরামর্শ দিয়েছেন। ভারতে প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজিত ‘হাই এনার্জি ফিজিক্স এন্ড ফেনোমেনোলজি’ ওয়ার্কশপের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি একজন। এই ওয়ার্কশপটি ভারতে হাই এনার্জি ফিজিক্স নিয়ে গবেষণাকারীদের জন্য, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত ছোট কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের পক্ষে , প্রধান অধিবেশন। তাঁর কেরিয়ারের শেষ দিকে তিনি স্নাতক-স্তরের ছাত্রছাত্রীদের পদার্থবিদ্যা গবেষণায শিক্ষাদানের বিষয়ে গভীরভাবে নিযুক্ত হন।
অমায়িক ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্রফেসর ডি. পি. রায় তাঁর সহকর্মীদের সাথে এক আত্মীয়তার বন্ধনে জড়িয়ে থাকতেন। তাঁর স্মরণসভায় উপস্থিত অনুরাগীদের আন্তরিক বেদনা, এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসা এবং অকুন্ঠ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন থেকে বিশ্বাস হয়, তিনি আমাদের থেকে দূরে চলে গেছেন, কিন্তু বিস্মৃত হয়ে যাবেন না।